গণপিটুনিতে মৃত্যু দুই অভিযুক্তের। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
শিশুমৃত্যুকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তেজনা নদিয়ার তেহট্টে। ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে দুই প্রতিবেশীকে পিটিয়ে হত্যা করলেন গ্রামবাসীরাই। আরও এক সন্দেহভাজন মহিলা গুরুতর জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন। শুধু তা-ই নয়, ভাঙচুর চালানো হয়েছে অভিযুক্তদের বাড়িতেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্রামে পৌঁছোয় বিশাল পুলিশবাহিনী। তাঁরাই কোনও মতে উন্মত্ত জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে রাত গড়ালেও উত্তেজনা কমেনি গ্রামে। এলাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
তেহট্টের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ঘটনা। নিহত শিশুর নাম স্বর্ণাভ বিশ্বাস (৯)। শুক্রবার দুপুর থেকে নিখোঁজ থাকার পর শনিবার সকালে বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে তৃতীয় শ্রেণির ওই পড়ুয়ার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের দাবি, তাদের ছেলেকে খুন করে দেহটি জলে ফেলে দিয়েছেন প্রতিবেশী উৎপল মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের লোকজন। শুক্রবার দুপুরে মাঠে খেলতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি স্বর্ণাভ। সারা দিন খোঁজাখুঁজির পরেও তাকে না পেয়ে প্রথমে তেহট্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরে শনিবার সকালে একটি ডোবা থেকে স্বর্ণাভর দেহ মেলে। দেহটি একটি ত্রিপলে মোড়া ছিল। এর পরেই উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে। উন্মত্ত জনতা অভিযুক্তের বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক মারধর শুরু করে ওই পরিবারের সদস্যদের। ওই পরিবারের পাটের গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর চালানো হয় বাড়িতে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের শীর্ষকর্তারা। গণপিটুনিতে গুরুতর জখম অভিযুক্ত উৎপল (৪২) ও সোমা মণ্ডলকে (৩৮) উদ্ধার করে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। বেধড়ক মারধর করা হয়েছে উৎপলের পুত্রবধূ নিশা মণ্ডলকেও। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এই প্রথম নয়, এর আগেও শিশু পাচারের মতো ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল পেশায় টোটো চালক উৎপল ও তাঁর পরিবারের। প্রথমবার ২০২১ সালে এবং দ্বিতীয়বার মাত্র মাসকয়েক আগে। শিশুদের অপহরণ করে পাচারের অভিযোগ উঠেছিল উৎপলদের বিরুদ্ধে। নিখোঁজ শিশুদের পরে পলাশি স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। দু’বারই স্থানীয় স্তরে সালিশি সভা ডেকে অভিযোগের মীমাংসা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের দাবি, একই কায়দায় স্বর্ণাভকেও অপহরণ করে পাচারের পরিকল্পনা ছিল অভিযুক্তদের। ঘটনার তদন্তের জন্য শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় এখনও উত্তেজনা থাকায় গ্রামে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
অন্য দিকে, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন স্বর্ণাভর মা। আট বছরের ওই শিশুর বাবা সত্যেন বিশ্বাস পেশায় টিভি মিস্ত্রি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘পরিকল্পনা মাফিক খুন করা হয়েছে ছেলেকে।’’ কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (গ্রামীণ) উত্তম কুমার ঘোষ বলেন, ‘‘এক শিশুর দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা অভিযুক্তদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ও মারধর করে। ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। একজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’’