ও পারের ঘ্রাণ নিয়ে এ পারে একুশে

প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে দিনটা। ‘আমি কি ভুলিতে পারি’ বলে পরের দিনই দিব্যি ভুলে যায় এ পারের বাঙালি। মান্য ভাষার যাও বা কিছু মান আছে, প্রান্তে পড়ে থাকে উপভাষার অজস্র কথা, ছড়া, বাগ্‌ধারা। আজ, বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে দিনটা। ‘আমি কি ভুলিতে পারি’ বলে পরের দিনই দিব্যি ভুলে যায় এ পারের বাঙালি। মান্য ভাষার যাও বা কিছু মান আছে, প্রান্তে পড়ে থাকে উপভাষার অজস্র কথা, ছড়া, বাগ্‌ধারা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৯
Share:

নানা বৈচিত্র সমন্বিত যে বাংলাভাষা, সেটাই আমার মতে মান্য বাংলা ভাষা। আপনি যদি কৃষ্ণনগর বা শান্তিপুরের বাংলা ভাষা শোনেন, আপনি যদি কোচবিহারের বাংলা ভাষা শোনেন কিংবা পুরুলিয়ার বাংলা ভাষা শোনেন, তা হলে তা আলাদা মনে হবে। এই বহুমুখিতাকে গণ্য করে এবং বৈচিত্রকে সঙ্গে নিয়েই মান্য বাংলা ভাষা তৈরি হয়েছে। কোনও একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি নয়। আমরা যদি শান্তিপুরের বাংলা ভাষা শুনি এবং পাশাপাশি মেদিনীপুরের বাংলা শুনি— তা হলে তার মধ্যে ফারাক বুঝতে পারব। এই ফারাকের সমন্বয় করেই একটি মান্য বাংলা ভাষা তৈরি হয়েছে। বৈচিত্রই হচ্ছে এই ভাষার শক্তি।

Advertisement

জয় গোস্বামী, কবি

Advertisement

দুই দেশের বাস্তব অভিজ্ঞতা দু’রকমের। সেই জন্যই দুই দেশের ছবি যখন ভাষা দিয়ে আঁকা হয়, তখন দু’রকমের ছবি ওঠে। বাংলাদেশের বাংলায় হয়তো মাটির গন্ধ একটু বেশি আর এ পারের বাংলায় বেশি নাগরিকত্বের ছোঁয়া। দুই বাংলাতেই একটা মান্য বাংলা ভাষা চালু রয়েছে। সেটা আজকের নয়, অনেক দিনের। সাধু ভাষা এক সময়ে ছিল মান্য বাংলা ভাষা, দুই বাংলাতেই লেখা হত। আর চলিত ভাষা হল এখনকার মান্য ভাষা, যাকে বাংলাদেশে বলে প্রমিত বাংলা। দুই প্রায় হুবহু এক। এটা সবাইকে চালাতেই হয়। তা না হলে মেদিনীপুরে লোক চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে পারবে না। একই ঘটনা ঘটবে শান্তিপুরের মানুষ এবং খুলনার মানুষের ক্ষেত্রে। তাকে তখন ওই মধ্যবর্তী বাংলাটিকেই গ্রহণ করতে হয়। সব ভাষাতেই এটা রয়েছে। ইংরেজির ক্ষেত্রেও যেমন বলা হয় ‘কুইনস ইংলিশ’, যেটা একটা স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজি। পৃথিবীর সব ভাষাতেই একটা মান্য ভাষা তৈরি হয়ে যায়।

পবিত্র সরকার, ভাষাবিদ

আপনারা যাকে মান্য বাংলা ভাষা বলেন, আমরা এ পার বাংলায় তাকে বলি প্রমিত বাংলা ভাষা। তবে বিষয়টা একই। লেখার ক্ষেত্রে একটা বাংলা ভাষা ব্যবহার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। লেখক তাঁর লেখায় চরিত্রের মুখ দিয়ে আঞ্চলিক ভাষা বলাতেই পারেন। কিন্তু সাহিত্যে লেখকের নিজস্ব লেখনি মান্য বাংলা ভাষায় হওয়াই বাঞ্চনীয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটাই বিশ্বাস করি। এই মান্য বাংলা ভাষার ভিত্তিভূমিও কিন্তু একসময়ে ছিল নদিয়া জেলাই। কৃষ্ণনগরের বাংলা ভাষাকে ভিত্তি করে আজকের এই মান্য বাংলা গড়ে উঠেছে।

আনিসুজ্জামান

সাহিত্যিক (বাংলাদেশ)

মান্য বাংলা ভাষা শব্দটি নতুন শুনলাম। আমি জানি প্রমিত বাংলা ভাষার কথা। ১৯৪৭ সালের আগে পর্যন্ত তো একটাই বাংলা ভাষা ছিল। বাংলা ভাষা আলাদা হয়েছে তো ১৯৪৭ সালের পর। প্রাচীন বাংলা ভাষার অখণ্ড ঐতিহ্য। সেখানে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন থেকে শুরু করে চণ্ডীদাস সমস্ত সাহিত্যেই অখণ্ড বাংলা ভাষার ব্যবহার। সেই সময়ের সাহিত্যেকেরা আগে যা রচনা করেছেন, সেখানেও এ সময়ের পরিবর্তন আসছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে বাংলা ভাষায় কথা বলেন, আমরাও তো সেই একই অভিধান ব্যবহার করি। অনেকে আঞ্চলিক ভাষাতেও লেখেন। তবে আমার মতে, যিনি যে ভাষায় লেখেন, সেটাই তাঁর কাছে মান্য ভাষা। কারও উপরে কিছু আরোপ করা উচিত নয়। বাংলাদেশে কথ্য ভাষার সঙ্গে প্রমিত ভাষার দূরত্বটা অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কথ্য ভাষার সঙ্গে প্রমিত ভাষার দূরত্বটা কম।

নির্মলেন্দু গুণ, কবি (বাংলাদেশ)

অনুলিখন: চৈতালি বিশ্বাস

বিন্যাস: জিয়া হক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন