মারধর সাংবাদিকদেরও

ডাক্তার না গুন্ডা, প্রশ্ন রোগীদের

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, প্রথমে তাঁরা চমকে ওঠেন প্রবল চিৎকারে। কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েছেন মৃত রোগীর বাড়ির পরিজনেরা।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ১২:৪০
Share:

প্রহৃত: হাসপাতলে জখম এক সাংবাদিক। নিজস্ব চিত্র

রাতের হাসপাতাল যেমন থাকে, তেমনই ছিল। রোগীরা কেউ রাতের খাওয়ার পরে ঘুমিয়ে পড়েছেন, কেউ ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কেউ আবার পাশের শয্যার সদ্য আলাপ হওয়া রোগীর সঙ্গে গল্প জুড়েছেন। চিকিৎসকেরা ‘রাউন্ড’ দিচ্ছেন। জরুরি বিভাগে ভিড়টাও তখন পাতলা হয়ে এসেছে। মাঝেমধ্যেই কোনও রোগীর মৃত্যুসংবাদে হাউহাউ করে কেঁদে উঠছেন পরিজনেরা। সেই সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সের যাতায়াত, আয়াদের ব্যস্ততা, হাসপাতাল চত্বরে ছোটাছুটি — সব মিলিয়ে মঙ্গলবার রাতে চেনা ছন্দেই ছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Advertisement

ছন্দপতন ঘটল রাত সাড়ে দশটা নাগাদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, প্রথমে তাঁরা চমকে ওঠেন প্রবল চিৎকারে। কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েছেন মৃত রোগীর বাড়ির পরিজনেরা। অভিযোগ, সেই বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। খবর পেয়ে লাগোয়া হস্টেল থেকে ছুটে আসেন প্রায় আড়াইশো জন জুনিয়র ডাক্তার ও মেডিক্যালের ছাত্ররা। তাঁদের তাণ্ডবে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Advertisement

অভিযোগ, রোগীর বাড়ির লোকজনকে রড-লাঠি-বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন তাঁরা। পাল্টা মারধর করেন রোগীর বাড়ির লোকজনও। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তার ও মেডিক্যালের ছাত্রদের হাতে প্রহৃত হন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও।

কিন্তু এমনটা ঘটল কেন?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কিডনির সমস্যা নিয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয় বহরমপুর থানার আঁধারমানিক পঞ্চায়েতের কালীতলাদিয়াড় গ্রামের দিলীপ মণ্ডলকে (৩৫)। রাতেই তিনি মারা যান। অভিযোগ, ওই যুবকের দেহ মেডিসিনের বিভাগের বাইরে বারান্দায় রেখে দেওয়া হয়। তাই নিয়ে কর্তব্যরত এক জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর বাড়ির লোকজনের বচসা বাধে। তখনই উত্তেজিত রোগীর বাড়ির লোকজন ওই জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করে। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে লাঠি-রড-বাঁশ-উইকেট নিয়ে জুনিয়র ডাক্তার ও ছাত্ররা এসে রোগীর আত্মীয়দের উপরে চড়াও হয়।

খবর পেয়ে ওই রাতেই মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বহরমপুর)অনীশ সরকারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স হাসপাতালে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বহরমপুর থানার আইসি শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে গোটা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

স্থানীয় টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান রঞ্জিত মাহাতো, হারেজরতন সরকার এবং এবিপি আনন্দের চিত্র সাংবাদিক আশিস বাগচিকে জুনিয়র ডাক্তাররা মারধর করে বলেও অভিযোগ। রঞ্জিত গুরুতর জখম হয়ে বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের রোগীদের কথায়, ‘‘ওরা ডাক্তার না গুন্ডা? নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। ওই তাণ্ডবে নার্স, আয়ারা ওয়ার্ড ছেড়ে পালিয়ে বাঁচে। আমরাও ভয়ে কাঁপছিলাম। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি হয় ওই জুনিয়র ডাক্তারদের।’’

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘রোগীর বাড়ির লোকজন ও সাংবাদিকদের মারধর করা ঠিক হয়নি। ওই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা করছি। জুনিয়র ডাক্তার বা কেউ জড়িত থাকলে আমরা পদক্ষেপ করব। তবে ওই ঘটনায় বেশ কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারও জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’’ ঘটনার পর থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের আচরণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement