কাঁচরাপাড়ার তরুণ হালদার। ছাপোষা মাঝবয়েসি মানুষটা নদিয়ার প্রশাসনিক ভবনের চাকুরে। কৃষ্ণনগরে জেলা পরিষদের দেওয়াল ঘেঁষা হোটেলে জমিয়ে লাঞ্চ করাটা তাঁর বরাবরের অভ্যাস। দিন দুয়েক আগে হোটেলের ছোকড়া মালিককে বলেছিলেন, ‘শীত তো ফুরোতে চলল রে। পেঁয়াজকলি ভাজা এ বার এক দিনও খাওয়ালি না তো?’
শুনতে হয়েছিল, ‘‘এ বাজারে পেঁয়াজকলি চাখতে হলে সঙ্গে করে কিনে আনবেন মেসোমশাই, কচি কলি এখনও ৬০ টাকা!’’ শুধু পেঁয়াজ কলিই বা কেন, শীতের যে কোনও আনাজে হাত ছোঁয়ালেই এখন ছ্যাঁকা লাগছে। শীতকাল মানেই অল্প খরচেই আনাজে উপচে পড়া ব্যাগ। সেই ধারণা কে কাঁচকলা দেখাচ্ছে এ বারের শীতের মেঘ মেঘ বৃষ্টি। কারণ বাজারে আনাজের আকাল। যা কিছু আসছে, তা মধ্যবিত্তদেরও নাগালের বাইরে।
এ বার আবহাওয়া যতই শীতল হোক না কেন, বাজারে তার কোন প্রভাব পড়েনি। উল্টে কান্দি থেকে কৃষ্ণনগর, নওদা থেকে নবদ্বীপ সর্বত্রই হুহু করে চড়ছে আনাজের দর। বেশ কয়েক দিন পর মঙ্গলবার সকালে কান্দি বাজারে গিয়ে আনাজের দর শুনে স্থানীয় ব্যবসায়ী পার্থ পালের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। ফুলকপি ১৫ থেকে শুরু। একটু বড় হলেই ২০, ২৫ টাকা। বেগুন ৪০ সরেস হলে ৫০। বাঁধাকপি ৩০, বিট-গাজর-ক্যাপসিক্যাম, না বলাই ভাল।
মাঘ মানে শীতের শেষের শুরু। সেই কারণে বাজারে শীতকালীন আনাজের প্রচুর আমদানি হয়। বছরে এই সময়েই সবচেয়ে সস্তা থাকে বাজার। শ’খানেক টাকায় তিন দিনের বাজার হয়ে যায়। অথচ চলতি শীতে ছবিটা ঠিক বিপরীত। বছরের অন্য সময় টোম্যাটো, বিট-গাজর, বিন বা ক্যাপসিক্যামের যত দেমাকই থাকুক না কেন, ভরা শীতে তার দাম দশ-বিশ টাকায় ঘোরাফেরা করে।
শীতকাল মানেই কচুরি-সহ কড়াইশুঁটির রকমারি পদ ঘরে ঘরে। সেই মটরশুঁটি এখন ৪০-৫০ নিচে নামেনি। আনাজ বিক্রেতারাই বলছেন, গত বছর এই সময় মটরশুঁটি ১২টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে। তবে এ বার ভেলকি দেখাচ্ছে বেগুন। এখন বছরভরই মেলে বেগুন। কিন্তু শীতে তুলতুলে বেগুন পোড়ার স্বাদই আলাদা। দাম ১০-১২ টাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। পেঁয়াজকলি ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বড়ঞার চাষি মেহেবুব শেখ বা ভরতপুরের সঞ্জয় ঘোষ জানান, এ বার শীতকালে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আনাজ যোগান দেওয়া যাচ্ছে না। এক কৃষি কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে প্রতিটি ফসল জলদি, মাঝারি এবং নাবি এই তিন পর্যায়ে চাষ করা হয়। সেপ্টেম্বরের শেষ বা অক্টোবরের প্রথমে বাজারে আসে জলদি চাষের ফসল। ওই জমিতেই কৃষক বোনে নাবি ফসল। কিন্তু এবার একের পর এক নিম্নচাপের কারণে জলদি এবং নাবি দুটো ফসলই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
তা হলে, আর যাই হোক, এই ভরা শীতের তপ্ত বাজারে পেঁয়াজ কলি...নাহ থাক!