কৃত্তিবাসী পুথির পথ চেয়ে বয়রা

কথিত আছে, শান্তিপুর ব্লকের বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের বয়রা গ্রামে ছিল কৃত্তিবাস ওঝার আদি বাসস্থান। শোনা যায়, এখানে বসেই বটগাছের তলায় রচনা করেছিলেন রামায়ণ।

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:১০
Share:

সংগ্রহশালায় রাখা মাইক্রোফিল্ম। নিজস্ব চিত্র

তাঁর আদি বাসভূমি ছিল শান্তিপুর ব্লকের বয়রায়। সেখানে তৈরি হয়েছে কৃত্তিবাস স্মৃতি গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা। কিন্তু সেখানেই নেই কৃত্তিবাসের লেখা আসল পুথি। ফ্রান্সের সংগ্রহশালা থেকে এর মাইক্রোফিল্ম সংগ্রহ করে এনে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এখানে আসল পুথি আনার দাবি উঠেছে। তবে সে দাবি পূরণ হয়নি এখনও।

Advertisement

কথিত আছে, শান্তিপুর ব্লকের বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের বয়রা গ্রামে ছিল কৃত্তিবাস ওঝার আদি বাসস্থান। শোনা যায়, এখানে বসেই বটগাছের তলায় রচনা করেছিলেন রামায়ণ। যা ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ নামে বাঙালির ঘরে-ঘরে পঠিত এবং প্রসিদ্ধ। তবে তাঁর নিজের হাতে লেখা আসল পুথি এখানে পাওয়া যায় না। ১৯৬০ সালে কৃত্তিবাস ওঝার কীর্তিকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সময়ে তৈরি হয় কৃত্তিবাস মেমোরিয়াল কমিউনিটি হল কাম মিউজিয়াম। বছর চারেক পরে তৈরি হয় ভবন। ১৯৬৭ সালে এই গ্রন্থাগার খুলে দেওয়া হয়।

বর্তমানে এর নাম কৃত্তিবাস স্মৃতি গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা। বিভিন্ন সময়ে নানা ভাষায় রামায়ণ অনুবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ভাষায় অনূদিত রামায়ণ রয়েছে এই সংগ্রহশালাতেই। যাঁর মধ্যে হিন্দি, ইংরাজি, মৈথিলী, নেপালি, অসমীয়া, পালি, গুজরাতি, লাওস-সহ বিভিন্ন ভাষা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ইংরাজি ভাষায় রামায়ণ সম্পর্কিত নানা প্রবন্ধ সংগ্রহ। রামায়ণ সম্পর্কিত নানা লেখা এবং গবেষণা-তথ্যও রয়েছে এই সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগারে। এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক এবং গবেষকেরা আসেন সমৃদ্ধ হতে। কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হতে হয় তাঁদের। রামায়ণ সম্পর্কিত অন্য বই, পত্রিকা পেলেও কৃত্তিবাসের হাতে-লেখা আসল পুথিটি তাঁরা দেখতে পান না।

Advertisement

প্রায় ৪২ বছর এই গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিকের কাজ করে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন ফুলিয়ার বাসিন্দা কেশবলাল চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, “কৃত্তিবাস ওঝার নিজের হাতে লেখা পুথি এই সংগ্রহশালায় ছিল না কোনওদিনই। তবে আসল পুথিটি এখানে থাকলে ভাল হত। অনেক মানুষই তো আসেন। যাঁদের মধ্যে গবেষকেরাও আছেন। মাইক্রোফিল্মটিই তাঁদের দেখতে হয়।”

জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালের ফ্রান্সের বিবলিওথেক ন্যাশিওনালে নামক একটি সংগ্রহশালায় রক্ষিত কৃত্তিবাসের পুথির মাইক্রোফিল্ম করে এনে এখানে রাখা হয়েছে। কেশব বলেন, “মনে করা হয়, এটিই আসল পুথি। আপাতত, তার মাইক্রোফিল্ম প্রিন্ট আউট করে রাখা হয়েছে। তবে মূল পুথি এখানে আনার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারই করতে পারে।”

মাইক্রোফিল্মটি প্রিন্টআউটের ল্যামিনেশান করে, সংগ্রহশালার ঘরে একটি কাচের বাক্সে রাখা রয়েছে। আসল পুথি দেখতে না পেলেও আপাতত তা দিয়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন ইতিহাস-উৎসুক দর্শক। তবে এই সংগ্রহশালায় আসল পুথি থাকবে না কেন, উঠছে সে প্রশ্নও ।

নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু বলেন, “এটি যেহেতু দু’দেশের ব্যাপার, তাই কেন্দ্রকে জানানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন