প্রতীকী ছবি।
থানা আছে, পুলিশ আছে। আছে আইন, আদালত। তার পরেও সালিশি কেন?
মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামের এক মাতব্বর বলছেন, ‘‘গাঁয়ে দশ বলে তো একটা ব্যাপার থাকে। ফলে দশকে না জানিয়ে কেউই কিছু করতে চান না। তা কেন, আমরাও তো এখন থানা-আদালতে যাওয়ার কথা বলি।’’
কখনও কখনও আবার থানার চৌকাঠ থেকেও ফিরে আসতে হয়। কারণ, ফড়েরা থাকেন সর্বত্র। তাঁরাও কখনও পরামর্শ দেন, ‘‘কী দরকার, থানা-পুলিশের ঝামেলায় পড়া! তার থেকে নিজেদের মধ্যেও মিটিয়ে নিন না।’’ কখনও আবার মিটমাট হয়ে যায় পুলিশের উপস্থিতিতে। সম্প্রতি যেমনটা হয়েছিল পদ্মাপাড়ের এক থানায়। মাদক কারবারে যে এলাকার নাম উঠে এসেছে বহু বার। সেখানে আইপিএল-এর বেটিং নিয়ে বেশ গন্ডগোল হয়ে। এক পরিবারের তিন সদস্য বেটিং-এ বেশ কয়েক লক্ষ টাকা হেরে যান। টাকা দিতে না পারায় পাওনাদারদের দাপটে সেই পরিবারের সদস্যেরা বিপাকে পড়েন।
শেষ পর্যন্ত গ্রামের এক মাতব্বর জানিয়ে দেন, ‘‘আপনারা উভয় পক্ষই আইনের চোখে অপরাধী। তাই বেটিং বিবাদ নিজেদের মধ্যে আপসে মিটিয়ে না নিলে দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু হবে।’’ উভয় পক্ষ রফা করে বিবাদ মিটিয়ে নেয়।
পুলিশের দাবি, একটা সময় সচেতনতার অভাব, যোগাযোগের সমস্যা, থানার সংখ্যা কম থাকার কারণে সালিশির রমরমা ছিল। তবে তা এখন অনেক কমে গিয়েছে। খুব সামান্য ব্যাপারেও মানুষ আইনের আশ্রয় নেন। নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, ‘‘সালিশি বেআইনি। জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নিই। মানুষকে নানা ভাবে সচেতনও করা হয়।’’
কিন্তু তার পরেও কি সচেতন হন লোকজন কিংবা মাতব্বরেরা? নওদায় বসেছে বিচার সভা। গ্রামের পঞ্চাশ জন ঘিরে রয়েছে বছর ত্রিশের এক মহিলাকে। তিনি স্বামীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সাত দিন পরে নিজের ভুল বুঝে স্বামীর কাছেই ফিরে আসেন। স্বামী মেনে নেন। কিন্তু মানতে নারাজ মাতব্বরেরা। তাঁরা নগদ ছ’হাজার টাকা জরিমানা দিতে বলেন। কিন্তু গরিব ওই মহিলার ছ’হাজার টাকা তো দূরের কথা ছ’শো টাকাও দেওয়ার ক্ষমতা নেই।
তা হলে? সে উপায়ও বাতলে দেয় সালিশি সভা, ‘ও মেয়ের চুল কেটে নেওয়া হোক।’ হলও তাই। দূরে দাঁড়িয়ে অসহায় স্বামী, সন্তান। জয়ের আনন্দে হইহই করছে গ্রামের কিছু লোকজন। কেউ পাশে দাঁড়ায় না। এগিয়ে আসে না কেউ। দশে মিলে দেয় লাজ!
(শেষ)