হাওয়ায় উড়ছে চরের আড়াল

শুধু নয়াচরে নয়, নির্মল চরের অনন্ত মাঠে বর্ষায় ফেনিল হয়ে আছে সবুজ ঝোপ। নিত্য প্রাতঃকৃত্যের জন্য সেই সব প্রাকৃতিক আড়ালই নির্মলচরের মানুষের এক মাত্র গন্তব্য।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নির্মলচর  শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

চর প্রান্তে পদ্মা। তারপর ফের অনন্ত নদী। মাঝে এক ফালি নয়াচর।

সেখানেই নতুন তিসি কলাইয়ের ফলন লক লক করছে। তবে, গ্রামবাসীরা সেখানে পা রাখতে পারেন না তেমন। চরের পুরনো বাসিন্দা সারওয়ার শেখ বলছেন, ‘‘যাব কি করে বলুন দেখি, বিএসএফের ফতোয়া, ‘নদী উজিয়ে ওই চরে কক্ষনো নয়।’’ কেন?

Advertisement

বিএসএফের কাছে সে প্রশ্ন করে শয়তানপাড়ার গোলাম মুর্শেদকে চড় খেতে হয়েছে। গালে হাত বুলিয়ে উর্দিধারীর থাপ্পর স্মণ করেন গোলাম। বিএসএফের ব্যাটালিয়ান কমান্ড্যান্ট পাল্টা প্রশ্ন রাখছেন, “দেশের নিরাপত্তা আগে না চরের মানুষের নিত্য নতুন চাহিদা, কোনটাকে প্রাধান্য দেব বলুন তো?”

শুধু নয়াচরে নয়, নির্মল চরের অনন্ত মাঠে বর্ষায় ফেনিল হয়ে আছে সবুজ ঝোপ। নিত্য প্রাতঃকৃত্যের জন্য সেই সব প্রাকৃতিক আড়ালই নির্মলচরের মানুষের এক মাত্র গন্তব্য।

Advertisement

পদ্মা উজিয়ে নির্মলচরে পা রাখলে অবশ্য ঝলমল করছে বৃষ্টি ভেজা পোস্টার— ‘সমাজের মঙ্গলে যত্রতত্র প্রাতঃকৃত্য নয়।’ ঘটা করে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ঘোমটা টেনে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে নিরন্তর সচেতনতার পাঠ দিয়ে চলেছেন, ‘মাঠের কাজ মাঠে নয়, ঘরে!’ কখনও বা মগরিবের আজানের পরে মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ইমামের নির্দেশ—শৌচকাজ, ঘরের শৌচালয়েই সারবেন গো-ও-ও।’ সারওয়ার বলছেন, ‘‘সে না হয় বুঝলাম কত্তা, কিন্তু সকালে মাঠে না গেলে চলবে কি করে, ঘরে তো আর শৌচাগার নেই!’’

প্রচার থাকলেও চরে সেই নির্মল চেহারা দিতে পারেনি স্থানীয় পঞ্চায়েত। মধ্য ষাটের মহম্মদ নবি বলছেন, ‘‘নির্মলচরের নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নির্মল গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছি আমরা। কিন্তু চরের নব্বই ভাগ বাড়িতেই যে শৌচালয় নেই।’’

যা হয়েছে, সেগুলি নিতান্তই নিয়মরক্ষার। যার অধিকাংশের মাথায় ছাদ নেই। কারও দরজা উড়ে গিয়েছে উত্তাল পদ্মার দামাল হাওয়ায়। আড়াই হাজার পরিবারের আট হাজার মানুষের বসবাস এই নির্মল চরে তবে সরকারি তরফ থেকে শৌচালয় হয়েছে মেরেকেটে সাতশো। বাকি বাড়িতে শৌচাগারের ইট পড়েনি।

মিনারুল সেখ তেরিয়া প্রশ্ন করছেন, ‘‘দিদিরা বলে গেলেন মাঠে যেন শৌচকর্ম না করি, তাতে মাছি বসে। তা, ছাদ নেই দরজা নেই ভাল করে সাফসুতরোও করা যায় না যে সব শৌচাগারে, সেখানে মাছি ঢুকবে না বুঝি?’’

চরে অনেক দিনের বাস সরুজ সেখের। জানান তিন মাস আগে সমস্ত কাগজ পত্র সমেত ন’শো টাকা দিয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরে গেছে, শৌচাগারের ইট আর আসেনি।

আখেরিগঞ্জের পঞ্চায়েত প্রধান সুচিত্রা মন্ডল আমতা আমতা করছেন, ‘‘হয়নি বুঝি! অনেক দিন চরে যাওয়া হয়নি...দেখি খোঁজ নেব!’’

তাঁর সেই নির্বিকার স্বর পুবালি হাওয়ায় ধুয়ে যাচ্ছে যেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন