পড়শি মহিলার সঙ্গে খোদেজা বেওয়া (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
জালিয়ানওয়ালা বাগে ইংরেজের পুলিশ নিরীহ ভারতীয়দের ওপর হত্যালীলা চালিয়েছিল যে বছর, ওই বছরেই তিনি পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন। পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা লাভ- সহ বহু ঘটনার সাক্ষী বেলডাঙার দলুয়া গ্রামের খোদেজা বেওয়া। মঙ্গলবার তাঁর ১০০ বছর পূর্ণ হবে। গোটা গ্রামের মানুষ তাঁর শতবর্ষ জন্মদিন পালন করতে নেমে পড়েছেন।
সরকারি নথি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি খোদেজা ১০০ বছরে পা দেবেন। তাঁকে দেখতে সোমবার সকালে গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় করেছিলেন। সকাল থেকেই বাড়িতে দর্শনার্থীদের ভিড়। দরিদ্র পরিবারের খোদেজাকে শীতে কষ্ট পেতে দেখে গ্রামবাসীরা তাঁকে শাল কিনে দিয়েছেন। দু’-একজন শাড়িও দিয়েছেন। মঙ্গলবার খোদেজার টালির বাড়িতেই জন্মদিন পালনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। জাহাঙ্গির আলি মল্লিক নামে এক পড়শি বললেন, ‘‘আমরা মঙ্গলবার ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে তাঁর জন্মদিন পালন করব। ওঁকে ভাল ভাল খাবারদাবারও কিনে দেব।’’
বেলডাঙা শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই দলুয়া গ্রাম। গ্রামের তেমাথার মোড়ে এক চায়ের দোকানদারকে খোদেজার কথা জিজ্ঞাসা করতেই এক গাল হাসি তাঁর মুখে। বললেন, ‘‘সেঞ্চুরি বুড়ির বাড়ি যাবেন? সোজা গিয়ে বাঁ হাতে।’’
এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মাটির দাওয়ায় বসে রয়েছেন খোদেজা। তাঁকে ঘিরে গ্রামের কয়েকজন মহিলা। পড়শিরা জানালেন, এখনও খালি চোখে ভালই দেখতে পান খোদেজা। কয়েক পাটি দাঁতও অক্ষত তাঁর। তবে শক্ত খাবার থেকে পারেন না। তিনি নিজে রান্না করেন। কখনও নাতির বউও তাঁকে খেতে দেন।
ওই বৃদ্ধা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, ‘‘অনেক মানুষ আসছে বাড়িতে। আমার বয়স কত জানতে চাচ্ছে? কী বলি বল দিকিনি। একশোর বেশিই বয়স হবে। কাল গ্রামের লোক বাড়িতে আসবে বলেছে। অনেক কিছু দেবেও। কিন্তু কই সরকার তো আমাকে একটা পাকা বাড়ি করে দিলনি।’’ শাড়ির খুঁট দিয়ে চোখের জল মুছলেন ওই বৃদ্ধা।
হতদরিদ্র অবস্থা খোদেজাদের। বাড়ির সামনে ছেঁড়া প্লাস্টিকের শতচ্ছিন্ন পর্দা। তাতে আড়াল হয় না। মাটির দেওয়া আর টালির চালের বাড়ি। বাড়িতে অতিথিকে বসতে দেওয়ার জন্য একটি মোড়া কেনার সামর্থ্যও নেই পরিবারের। তাঁদের মধ্যে ৮৩ বছরের আহমদ শেখ মায়ের সঙ্গেই থাকেন।
তিনি বললেন, ‘‘মঙ্গলবার মা’র ১০০ বছর হবে। আমারও বয়স নয় নয় করে অনেক হল। কত কিছুই দেখলাম। দেশ স্বাধীন হল। ওইদিন আমরা গ্রামে জাতীয় পতাকা তুলেছিলাম। লজেন্স, বাতাসা, মিষ্টি বিলি হয়েছিল। সরকার তো কত লোককেই তো বাড়়ি করে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কিছুই পেলাম না।’’
মা-ছেলের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে দলুয়ার।