পাশের হোটেল থেকে কখনও কোনও খাবার মেলে কারও। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
তাঁদের হাতে কেউ তুলে দেননি মাস্ক। কেউ হয়তো পেয়েছেন প্রশাসন বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে কিন্তু তা পরার জন্য সচেতন করা হয়নি। তবু জোরাজুরি করলে মাস্ক পরতেন। হাত ধুতেন। লকডাউন পর্বে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন প্রশাসন ও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগেও খাবার দিয়েছেন। কিন্তু এখন আনলক পর্বে আবার ফিরে এসেছে তাঁদের সেই পুরনো চেহারা। কারও গালভর্তি দাড়ি, মাথা ভর্তি চুল, জামার উপরে চাপানো জামা, ছেঁড়া ট্রাউজ়ার পরেই ওদের শহরের পথে পথে ঘোরা। ওদের মাথার ওপর ছাদ নেই, খাওয়ার কোন ঠিক নেই, ঘুমোনোর কোন সময় নেই, ওরা ভবঘুরে। মুখে মাস্ক নেই, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার নেই।
পেটে খিদে আছে কি না তা প্রকাশের ভাষাও নেই অনেকের, তাই ত্রাণও নেই। এক টুকরো পাউরুটি কিংবা বিস্কুট ছুড়ে দেওয়ার লোক মিলেছে মাত্র। তবে তাও যেন দূরে দূরে। ছোঁয়াচ এড়িয়ে। বহরমপুর রেল স্টেশন, খাগড়া ঘাট রেলস্টেশন, স্বর্ণময়ী বাজার, চুঁয়াপুর, বাসস্ট্যান্ডসহ বহরমপুর শহরের একাধিক জায়গায় তাঁদের দেখা মেলে। একটু সচেতন যাঁরা, তাঁদের কেউ বলেন, ‘‘মাস্ক, সাবান কোথায় পাব? পেটে খাবারই তো পড়ে না।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস লেন, ‘‘এই মানুষগুলোকে যদি এখনকার পরিস্থিতিতে হোমে রাখা যেত, তা হলে ভাল হত।’’
করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় সাধারণ মানুষ তখন গৃহবন্দি হয়ে পড়েছিল। তখন বন্ধ ছিল দোকান পাট। রাস্তা ঘাট ছিল সুনসান। সেই প্রায় জনশূন্য শহরই বরং ছিল ওদের কাছে আশীর্বাদ।
লকডাউন পর্বে ঘুরে ঘুরে ভবঘুরেদের খুঁজে বের করে রান্নাকরা খাবার প্রতিদিন তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী তোতন বিশ্বাস। আনলক পর্বে তাঁরও ব্যবসা চালু হয়ে গিয়েছে। সময় কমে গিয়েছে। তোতন বলছেন, “তবু সন্ধ্যের সময় ধারে কাছে যে ক’জনকে পাই তাদের হাতে পাউরুটি ডিম কিংবা কলা তুলে দিয়ে আসি।” শুধু তাই নয় তোতন বলেন, “এদের নিরাপত্তার বড্ড অভাব আমাদের শহরে। এই শহরেই কত উন্মাদিনীর মা হওয়ার খবর শুনেছি, তাই এদের জন্য চিন্তা হয়।” সেদিকে লক্ষ রেখেই এদের নিরাপদ আশ্রয় কিংবা বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানালেন, “এদের সঙ্গে কথা বলে যে থানায় বাড়ি সেই থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” এখনও সেই কাজ চলছে পুলিশের তরফ থেকে।