পাঁচে প্রশ্নবাণ, ধন্দে স্কুল কর্তৃপক্ষ

পরিকাঠামোর বালাই নেই বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই অবস্থায় প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি চালু করার সরকারি নির্দেশে হতবাক বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

বিমান হাজরা ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৭
Share:

নিজস্ব চিত্র

শিক্ষা দফতরের নির্দেশ নাকি বাণ!

Advertisement

গত ২২ নভেম্বরের পর থেকে অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছ থেকে বাণের মতোই ছিটকে আসছে একের পর এক প্রশ্ন

—‘এত দিন তো চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছি। আচমকা পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেব কী করে?

Advertisement

—‘স্কুলে তো আর ঘরই নেই। পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা বসবে কোথায়?’

—‘আমাদের স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। ফাইভের ক্লাস কে নেবেন?’

—‘পাশেই রয়েছে আপার প্রাইমারি। তা হলে প্রাথমিকে ছেলেকে ফাইভে ভর্তি করব কেন?’

—‘হাইস্কুলের চালু পরিকাঠামো ভেঙে পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিকে ঠেলে দেওয়ার কারণটা ঠিক কী?’

পরিকাঠামোর বালাই নেই বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই অবস্থায় প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি চালু করার সরকারি নির্দেশে হতবাক বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের মোট ১৭৯৯৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জেলা শিক্ষা দফতর ও শিক্ষক সংগঠনেরও জানা নেই, মুর্শিদাবাদে ঠিক কতগুলি স্কুল এবং কোন কোন স্কুল রয়েছে সেই তালিকায়।

এবিপিটিএ-র জেলা সভাপতি আব্দুস সালাম বলছেন, “বহু স্কুলেই শিক্ষক ও ঘরের অভাব রয়েছে। আমরা প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি চালু করার বিরুদ্ধে নই। একসময় বহু প্রাথমিকেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হত। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিক্ষা দফতর শিক্ষক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিলে ভাল হত।” এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক নবেন্দু সরকার বলছেন, ‘‘যে সব প্রাথমিকে পরিকাঠামো রয়েছে সেখানে পঞ্চম শ্রেণি চালু করাই ভাল।’’

তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি শুভজিৎ সিংহ বলেন, “আমাদের সঙ্গে গত ১ জুন আলোচনায় বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, গত বছরের স্কুল সংক্রান্ত যে তথ্য প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জমা পড়েছে তার ভিত্তিতেই স্কুল বাছাই করে সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পড়ানো হবে। উচ্চ প্রাথমিক ও বহু হাইস্কুলেও পঞ্চম শ্রেণি থাকছে। তাই খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।”

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন— যে সব স্কুলে পরিকাঠামো রয়েছে সেখানেই পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হবে। তার পরে ধাপে ধাপে বাকি স্কুলের পরিকাঠামো তৈরি করে সেখানেও পঞ্চম শ্রেণি পড়ানো হবে।

তার পরেও অবশ্য ধন্দ কাটছে না। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন বহরমপুরের এক তরুণী। নির্দেশিকার খবর শোনার পর থেকে তিনিও বেশ উদ্বিগ্ন। ওই তরুণী বলছেন, ‘‘আমাদেরকে যে এ বার থেকেই ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া পড়াতে হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়! তাই পঞ্চম শ্রেণির বইপত্র জোগাড় করছি। এত দিন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াচ্ছিলাম। পঞ্চমে ক্লাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। একটু নার্ভাস তো লাগছেই!’’

মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) নৃপেনকুমার সিংহ বলছেন, ‘‘জেলার কত বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি চালু হবে তা আমাদেরও জানা নেই। নির্দেশিকার বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে দেখেছি। মেল পেলেই আমাদের সমস্যার কথা শিক্ষা দফতরে জানাব।’’

রঘুনাথগঞ্জের কিশলয় প্রাথমিক বিদ্যালয় চলে হাইস্কুলের ক্যাম্পাসে। প্রধান শিক্ষক ত্রিলোচন দাস বলছেন, “একই ক্যাম্পাসে হাইস্কুল। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি চললে কে আর পরিকাঠামোহীন আমার প্রাথমিকে ভর্তি হবে?’’ জঙ্গিপুরের জোতকমল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা বলছেন, “হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণি চালু থাকলে কোন অভিভাবক দুর্বল পরিকাঠামোর প্রাথমিক স্কুলে পড়াতে যাবেন ছেলেমেয়েকে?”

এর মধ্যে ইতিবাচক দিকও দেখছেন অনেকে। বেলডাঙার সূতীঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ হিলালউদ্দিন বলছেন, ‘‘দূরে উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ার কারণে পঞ্চম শ্রেণিতেই কেউ কেউ স্কুলছুট হয়ে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি থাকলে ওই সম্ভাবনা অনেকটাই দূর হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন