এক মেয়েকে বাঁচাতে গিয়েই মৃত মা আর কোলের শিশু

ঘটনাটি শমসেরগঞ্জের বাসুদেবপুর হল্ট স্টেশনের কাছে, শুক্রবার সন্ধ্যেয়। মৃতার নাম রেকসোনা বিবি (২৫) তাঁর দু’মাসের শিশুটি মুসফিকা খাতুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৪
Share:

রেকসোনা বিবি। —নিজস্ব চিত্র

রাস্তা ছেড়ে সহজে স্টেশনে পৌঁছতে লাইন ধরে হাঁটার মাশুল দিতে হল মা-মেয়েকে। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছেন মৃতার আড়াই বছরের এক মেয়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ছোট্ট মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়েই ধাক্কা লেগে মা ও তাঁর কোলের শিশুটির এই মর্মান্তিক মৃত্যু।

Advertisement

ঘটনাটি শমসেরগঞ্জের বাসুদেবপুর হল্ট স্টেশনের কাছে, শুক্রবার সন্ধ্যেয়। মৃতার নাম রেকসোনা বিবি (২৫) তাঁর দু’মাসের শিশুটি মুসফিকা খাতুন। বাড়ি ফরাক্কার মহাদেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালনগর গ্রামে।

সুতির ডিহিগ্রামে মৃতার বাবার বাড়ি। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা মৃতার আড়াই বছরের মেয়ে নাসরিন খাতুনকে উদ্ধার করলেও মামার বাড়িতে বসে নির্বাক মেয়ে মায়ের খোঁজে কান্নাকাটি করছে। রেকসোনার স্বামী পেশায় দিনমজুর টনি শেখ জানান, বাড়িতে খাওয়া দাওয়া সেরে শুক্রবার দুপুরে দুই মেয়েকে নিয়ে শমসেরগঞ্জের কাঁকুরিয়ায় যায় দিদির বাড়ি। সেখানেই অসুস্থ শাশুড়িকে দেখে সন্ধ্যে নাগাদ গোপালনগরে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁদের। টনি বলেন, ‘‘রাত সাড়ে আটটা বেজে গেল ফিরল না, ফোন করে শুনলাম, এমন কাণ্ড!’’

Advertisement

হল্ট স্টেশন লাগোয়া দুর্ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র

প্রত্যক্ষদর্শীদের অন্যতম বাসুদেবপুর লাইন পাড়ের চায়ের দোকানদার অসিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ওরা টোটো থেকে নামেন রেল গেটের কাছে। ওই মহিলার কোলে ছিল এক শিশু। আর হাত ধরে ছিল আর এক মেয়ে। টোটো থেকে নেমে ওঁরা রেল লাইন লাগোয়া ছোটো রাস্তা ধরে বাসুদেবপুর হল্ট স্টেশনের দিকে যেতে থাকে।’’ তিনি জানান, লাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বড় মেয়েটি বার বার মহিলার হাত ছেড়ে রেল লাইনের উপরে উঠতে যাচ্ছিল। বার কয়েক তাকে থামালেও এক সময় আচমকা মেয়েটি মায়ের হাত ছেড়ে লাইনের উপরে ওঠার চেষ্টা করতেই নজরে পড়ে তাদের সামনের লাইনে ট্রেন আসছে। চায়ের দোকানে বসে ছিলেন হয়দর আলি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পেয়ে চিৎকার করছি। কিন্তু তার আগেই দেখলাম মেয়েটিকে ছোঁ মেরে লাইনের উপর থেকে টেনে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলেই ওই মহিলা ট্রেনের ধাক্কায় পাশে ছিটকে পড়লেন কোলের মেয়েটিকে নিয়ে।’’

হুঁশ-ফেরেনি। দুর্ঘটনার পরেও পারাপার। নিজস্ব চিত্র

মেয়েটি তখন উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ট্রেনের ধাক্কায় ক্ষত বিক্ষত হয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন কোলের শিশু ও মহিলা। বড় মেয়েটিকে স্থানীয় এক বাড়িতে রেখে আহত দুজনকেই নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই সুতির মহেশাইল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান দু’জনেই। রেল পুলিশের ধুলিয়ানের আই সি শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “দুর্ঘটনার পরপরই মা ও মেয়ে দুজনকেই মহেশাইল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁদের। ঝুঁকি নিয়ে হাঁটা কখনই উচিত হয়নি। সতর্কতার অভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে এখানে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement