কাঁদলেন জনপ্রতিনিধিরা

লাঞ্ছনা জোটে মহিলা বলেই

ওঁরা শুনতে এসেছিলেন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত পরিচালনায় নারীর ক্ষমতার কথা। কিন্তু মন্ত্রীর সামনে নিজেদের নাকাল হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন অনেকে।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কল্যাণী শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৯
Share:

ওঁরা শুনতে এসেছিলেন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত পরিচালনায় নারীর ক্ষমতার কথা। কিন্তু মন্ত্রীর সামনে নিজেদের নাকাল হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন অনেকে।

Advertisement

ওঁদের কেউ পঞ্চায়েত প্রধান, কেউ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কেউ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বা কর্মাধ্যক্ষ। হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই মহিলা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কল্যাণী বিদ্যাসাগর মঞ্চে ‘নারীর ক্ষমতায়ন এবং পঞ্চায়েতের ভূমিকা’ নামে কর্মশালার আয়োজন করেছিল পঞ্চায়েত দফতর। উদ্দেশ্য, গাঁ-গঞ্জের আটপৌরে মহিলাদের হাতে কেমন চলছে প্রশাসন, তা সরাসরি তাঁদের মুখ থেকেই শোনা।

সভায় হাজির ছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং মহিলা-শিশু ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজা। শুরুতেই সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘প্রায়ই শুনি, আপনাদের স্বামীরাই বকলমে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ চালান। সেটা কি ঠিক? যদি প্রশাসন চালাতে অসুবিধা হয়, আমাদের বলুন।’’

Advertisement

শুরুটা ভালই হয়েছিল। কয়েক জন পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দাবি করেন, বকলমে পুরুষদের প্রশাসন চালানো শুরুতে তাঁদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। কিন্তু এখন তাঁরা পোক্ত হয়ে গিয়েছেন। প্রকল্পের খুঁটিনাটি মুখস্ত, পঞ্চায়েতের আইনকানুনও নখদর্পণে। কিন্তু সুর কাটে হুগলির এক পঞ্চায়েত প্রধানের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতা আসলে যদি কারও থাকে তো তা অফিসার আর কর্মীদের। কোন বিষয়ে আমি কী সিদ্ধান্ত নেব, তাঁরাই ঠিক করে দেন। প্রতিবাদ করেছিলাম বলে এক কর্মী তেড়ে মারতে এসেছিল।’’ বলতে-বলতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। কান্না জড়ানো গলায় বলেন, ‘‘মেয়ে বলেই এটা করতে পেরেছিল। অনেককে জানিয়েছিলাম। কিছু লাভ হয়নি।’’

ওই কান্না দেখে চোখ মুছতে শুরু করেন আরও কিছু মহিলা। পরে আরও চার-পাঁচ জন বলতে উঠে কাঁদতে শুরু করেন। তাঁদেরও একই কথা। কারও অভিযোগ, সরকারি অফিসারদের কাছে কোনও কাজ নিয়ে গেলে মহিলা বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। পুরুষ জনপ্রতিনিধিরা পরে এসে অবলীলায় তাঁদের দেখা পেয়ে যান। কারও আক্ষেপ, মহিলা বলেই দলের নেতারা কটূ কথা বলেন। অনেক সময়ে তাঁরাই নির্দেশ দেন, কী করতে হবে। সেই হুকুম তামিল করতে হয়।

বলাই বাহুল্য, এই মহিলাদের বড় অংশ শাসকদল তৃণমূলের। কলকাতা লাগোয়া এক জেলা পরিষদের সভাধিপতি অভিযোগ করেন, তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এক পুরুষ কর্মাধ্যক্ষ ফতোয়া জারি করেছেন, যাতে তাঁর কাছে ফাইল না পাঠানো হয়। মন্ত্রী তাঁকে পরে বলেন, ‘‘ আগেও এমন অভিযোগ করেছ। আজ আবার বললে। দেখছি।’’

কর্মশালা হয়ে গিয়েছে শুক্রবার। শনিবার সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘প্রত্যেককে বলেছি, সরাসরি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠান। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের কিছু নেতার বিষয়ে যে সব অভিযোগ এসেছে, মন্ত্রীর চেয়ার থেকে সে ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব নয়। তবু দেখব, কী করা যায়।’’

মন্ত্রী কিছু করুন বা না-ই করুন, এই যে একের পর এক মহিলা মুখ খুললেন, সেটাই বা কম কী?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন