মহিলারা নেমে রুখেছিলেন

প্লাস্টিক বন্ধ করার কাজে নামানো হয়েছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের। পুরসভার তরফে তাঁদের প্লাস্টিক বিরোধী প্রচারেপ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা বাজারে বাজারে গিয়ে দোকানদার ও খরিদ্দারদের সচেতন করার চেষ্টা করেছিলেন।

Advertisement

মনিরুল শেখ

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৫
Share:

—ফাইল ছবি

মোটে বছর দেড়েক আগের কথা। প্লাস্টিক-দূষণ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছিল কল্যাণী। কোমর বেঁধে নেমেছিল পুরসভা। বাজার বিভাগের লোকজন ঘন ঘন গিয়ে দেখতেন বাজারে প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে কি না। বড় বড় দোকানগুলিতেও প্লাস্টিক বন্ধ করতে বলা হয়েছিল।

Advertisement

প্লাস্টিক বন্ধ করার কাজে নামানো হয়েছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের। পুরসভার তরফে তাঁদের প্লাস্টিক বিরোধী প্রচারেপ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা বাজারে বাজারে গিয়ে দোকানদার ও খরিদ্দারদের সচেতন করার চেষ্টা করেছিলেন। এতে গোড়ায় বেশ কাজ হয়েছিল। শহর থেকে অনেকটাই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল প্লাস্টিক। কিন্তু সবই স্থায়ী হয়েছিল মাত্র কয়েকটা মাস। তার পরেই ফের যে-কে সেই।

পুরসভার তরফে আর নজরদারি নেই। গোষ্ঠীর মহিলারাও এখন আর বাজারে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বোঝান না। মাছ-মাংস ও আনাজের কারবারিরা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেদার দিয়ে চলেছেন। কোনও কোনও বিক্রেতা যেচে দুটো প্লাস্টিকও দিয়ে দেন, না-হলে যে মাছের রক্ত লেগে যাবে থলেতে!

Advertisement

এ ভাবেই শহরের বুদ্ধপার্ক, ১৪ নম্বর, ৩ নম্বর, ১ নম্বর, এ-২, সপ্তপর্ণী বাজারে দেদার চলছে প্লাস্টিক। দিন কয়েক আগে বুদ্ধপার্কের বাজারে আনাজ কিনতে গিয়ে দেখা গেল, খরিদ্দারের সঙ্গে থলে রয়েছে কি না তার তোয়াক্কা না করেই প্লাস্টিক প্যাকে আনাজ ভরে দিচ্ছেন বিক্রেতা। আইটিআই কলোনির বাসিন্দা বাপি দাস জানাচ্ছেন, রোজ সকালে ২ নম্বর বা সপ্তপর্ণী মার্কেটে যান তিনি। সব বাজারেই মাছ-মাংস ভরে দেওয়া হয় প্লাস্টিকের প্যাকেটে। মূল শহর থেকে খানিক দূরে অনুকূল মোড় বা কাঁঠালতলা বাজারে তো কোনও সময়েই সে ভাবে নজরদারি ছিল না। ফলে সেখানে প্লাস্টিক নিয়ে কোনও লুকোছাপাও নেই। ওই এলাকার বাসিন্দা তাপস মণ্ডল বলছেন, ‘‘প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে অনেক তত্ত্বকথা বলা হয়। কিন্তু কে শোনে!’’

গত বছর প্লাস্টিক বন্ধের ব্যাপারে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নিবেদিতা বসু। তাঁর মতে, ‘‘আইন করে এ সব বন্ধ করা যাবে না। এক সময় গোষ্ঠীর মেয়েরা যখন বাজারে গিয়ে সচেতন করতেন, কিছু ক্ষেত্রে মাছওয়ালারা বঁটি নিয়ে তাঁদের তাড়াও করেছে। ক্রেতারা তখন ওই মাছ বিক্রেতাকেই সমর্থন করেছিলেন।’’

পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, এক সময় প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করেছিল গোষ্ঠীর মেয়েরা। কিন্তু তা সে ভাবে জনপ্রিয় হয়নি। অনেকেই পুরনো কাপড়ে তৈরি ভেবে ওই ব্যাগ কেনেননি। আর এখন তো প্লাস্টিক স্বমহিমায় ফিরেছে। বি-২ এলাকার রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা সকলেই জানি, প্লাস্টিক কী ভয়ঙ্কর। এই সব পাতলা প্লাস্টিক পরিবেশের সঙ্গে মিশতে কয়েকশো বছর সময় নেয়। প্লাস্টিকের বোতল, কাপ এ সবে জল-চা খেলে ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে। তা সত্ত্বেও তো দেদার চলছে!’’

পুরকর্মীদের মতে, নাগরিকদের একটা বড় অংশের মধ্যে প্লাস্টিক-বিরোধী মনোভাব তৈরি না হলে এটা তা পাকাপাকি বন্ধ করা যাবে না। কৃষ্ণনগরে প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে টানা প্রচার চালিয়ে এসেছে ‘পরিবেশ বন্ধু’ নামে একটি অসরকারি সংস্থা। এখন পুরসভাও জরিমানা ঘোষণা করে পুরোদস্তুর ঝাঁপিয়েছে।

‘পরিবেশ বন্ধু’ সংগঠনের তরফে মহম্মদ ইনাসউদ্দিন বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগরের নাগরিকদের একাংশই প্রথমে প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এই নাগরিক যোগদান ছাড়া প্লাস্টিকে‌র বিরুদ্ধে যুদ্ধ বেশি দিন স্থায়ী হবে না।’’ কল্যাণী তা হলে কড়িকাঠ গুনবে?

তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত কল্যাণী পুরসভার পুরপ্রধান সুশীলকুমার তালুকদার বলছেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা যখন মাঠে নেমেছিলেন, প্লাস্টিক প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নভেম্বর থেকে আবার তাঁদের নামানো হবে। প্লাস্টিক নিয়ে ধরা পড়লে জরিমানাও হয়।’’

কৃষ্ণনগর এখন আছে প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে। সেই জায়গায় দল নিয়ন্ত্রিত কল্যাণী পুরসভাকে কি রাজনৈতিক সমর্থনে ভাটা পড়ার ভয়ে হাত গুটিয়ে থাকতে হচ্ছে? পুরপ্রধানের দাবি, ‘‘সে সবের প্রশ্নই ওঠে না। পরিবেশ ভাল রাখতে পুরসভা যে কোনও পদক্ষেপ করতে প্রস্তুত।’’

ফলেন পরিচীয়তে...।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন