কয়েক দশক ধরে রেলপথের স্বপ্ন দেখছেন করিমপুর ও ডোমকলের মানুষ। লাইন পাতার জন্য একাধিক বার মাপজোকও হয়েছে। বাজেটে কৃষ্ণনগর-বহরমপুর ভায়া করিমপুর ও ডোমকল লাইনে রেল চলার কথাও উঠেছে। কিন্তু সে সবই রয়ে গিয়েছে কথার কথাতেই।
এর মধ্যেই সদর শহর থেকে দূরবর্তী করিমপুরে সংরক্ষিত টিকিট কাউন্টারের প্রস্তাব দেয় রেল। এলাকার লোকজন ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো দুধের স্বাদ ঘোলে মিটবে। দিল্লি-মুম্বই যাওয়ার টিকিট মিলবে বাড়ির পাশের কাউন্টার থেকে। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্যের দড়ি টানাটানিতে আটকে রয়েছে সেই কাউন্টারের স্বপ্নও।
উভয় পক্ষের বার সাতেক চিঠি চালাচালিতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বেড়েছে কেবল দুই পক্ষের ভুল বোঝাবুঝি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে চিঠির বয়ানও। এই অবস্থায় আদৌ কাউন্টার তৈরি হবে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ দানা বেঁধেছে সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুর ও ডোমকলে।
২০১৪ সালে তৎকালীন রেলের রাষ্ট্রমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী ঘোষণা করেন, করিমপুর ১ ব্লকে রেলের আসন সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। দিন সাতেক পর, ১৩ মার্চ তৎকালীন বিডিও তাপস মুখোপাধ্যায় ওই সংরক্ষণ কেন্দ্র চালুর জন্য রেলমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠান। ১৩ নভেম্বর অনুমোদন মেলে। বিডিও রেল কর্তৃপক্ষকে জানান, ওই কেন্দ্র চালানোর জন্য দু’জন কর্মী-সহ সব পরিকাঠামোই ব্লক প্রশাসন দেবে। তবে টিকিটের কমিশন বাবদ কিছু টাকা দিতে হবে রেলকে। রেল কমিশন তা দিতে অস্বীকার করে। তবে ‘সার্ভিস চার্জ’ দিতে সম্মত হয় রেল মন্ত্রক।
এই চিঠিচাপাটির মাস খানেক পরেই বদলি হয়ে যান তাপসবাবু। রেল পুনরায় সংরক্ষণ কেন্দ্রের অগ্রগতির হালহকিকত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায় ব্লক প্রশাসনকে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিডিও সুরজিৎ ঘোষ চিঠির বয়ান মহকুমাশাসককে জানান। তেহট্টের মহকুমাশাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায় রেলের চিঠির মধ্যে ‘নিয়মভঙ্গ’-এর আঁচ পান। অর্ণববাবু বলছেন, “রেলের পাঠানো প্রস্তাবের গোড়াতেই গলদ রয়েছে। রাজ্য সরকারের কর্মী ওই কেন্দ্র চালাতে পারেন না।’’ তাহলে বছর তিনেক আগে তাপসবাবু কেন্দ্র চালানোর জন্য কী ভাবে কর্মী দিতে সম্মত হয়েছিলেন? অর্ণববাবু অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি।
এখন রেল বার বার চিঠি পাঠালেও কোনও উত্তর মিলছে না। ব্লক বা মহকুমা প্রশাসনও তাদের দেওয়া আগের প্রস্তাব (দু’জন কর্মী দেওয়া) থেকে সরে এসেছে। এই অবস্থায় রেল গত বছর ৩০ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জানিয়েছিল, দিন পনেরোর মধ্যে উত্তর না মিললে প্রস্তাবটাই ঠান্ডা ঘরে চলে যাবে। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের এই দড়ি টানাটানিতে যারপরনাই বিরক্ত গোটা করিমপুর ও ডোমকলের মানুষ। কারণ, সীমান্তের ওই দুই জনপদেই রেললাইন নেই। কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে যাওয়ার জন্য রেলের টিকিট কাটতে লোকজনকে যেতে হয় কৃষ্ণনগর ও বহরমপুরে। করিমপুরের রাজেন্দ্র বিশ্বাস, জলঙ্গির ফকির শেখেরা বলছেন, ‘‘বেঁচে থাকতে ট্রেনের স্বপ্নটা পূরণ হল না। এখন শুনছি নাকি টিকিট কাউন্টারও হবে না।’’