নেট দুনিয়া ফুঁড়ে মাঠে ছেলেরা

ফুটবল মাঠ ঘিরে এই ছবির কিছুটা হলেও বদল ঘটেছে নদিয়ায়। স্মার্টফোনের পাঁচ সেন্টিমিটারের ময়দান ছেড়ে ফের জলকাদার ফুটবল মাঠে ভিড় করছে পাঁচ থেকে পনেরো। সাইডলাইনের পাশে জলের বোতল তোয়ালে নিয়ে অপেক্ষায় থাকছেন সুবেশ অভিভাবকের দল।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০২:০১
Share:

মাঠ আছে, আছে ক্লাবও। স্থানীয় পর্যায়ে লিগ থেকে ছোটবড় টুর্নামেন্ট অগুন্তি। অথচ মফস্সল শহর, গ্রাম কিংবা জেলা সদরের ফাঁকা ফুটবল মাঠে কোথাও দিনের বেলায় শুকোয় মরশুমি ফসল, তাঁতের সুতো অথবা ধোপা বাড়ির ধোয়া কাপড়। অবাধে চড়ে বেড়ায় গরুছাগল। সন্ধ্যা নামলেই নেশার ঠেক। কোন মাঠে নতুন চার-চাকায় হাত পাকান সদ্য কেনা গাড়ির মালিক।

Advertisement

ফুটবল মাঠ ঘিরে এই ছবির কিছুটা হলেও বদল ঘটেছে নদিয়ায়। স্মার্টফোনের পাঁচ সেন্টিমিটারের ময়দান ছেড়ে ফের জলকাদার ফুটবল মাঠে ভিড় করছে পাঁচ থেকে পনেরো। সাইডলাইনের পাশে জলের বোতল তোয়ালে নিয়ে অপেক্ষায় থাকছেন সুবেশ অভিভাবকের দল। এই ছবি হালের কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ, কল্যাণী, রানাঘাট, চাকদা অনেক জায়গাতেই চোখে পড়ছে।

মাঠ বিমুখ ছেলেদের মাঠে ফেরাতে এক দীর্ঘকালীন উদ্যোগ নিয়েছে নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা। কয়েকবছর ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের অনুর্ধ পনেরো বছর বয়সীদের নিয়ে ধারাবাহিক ফুটবল শিবিরের আয়োজন করেছে নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা। নিয়মিত ভাবে শৃঙ্খলার সঙ্গে ওই সব ফুটবল ক্যাম্পে ১২ থেকে ১৫ বছরের স্থানীয় খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোথাও এলাকার ক্লাব, কোথাও স্থানীয় পুরসভা কিংবা আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থাকে। এবং প্রতি বছর সমস্ত প্রশিক্ষণ শিবির গুলিকে নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে বড় মাপের আন্তঃকোচিং ক্যাম্প ফুটবল প্রতিযোগিতার।

Advertisement

তাতেই ফলেছে মেওয়া। স্থানীয় ফুটবলের বন্ধ্যা দশা অনেকটাই কেটেছে। ফুটবলার তৈরির আঁতুড়ঘরে নিয়মিত নজরদারি ফলে ফের ফুটবলে বাড়ছে আগ্রহ। করিমপুর থেকে কল্যাণী মাঠে মাঠে আবার ছেলেরা ভিড় জমাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপের মরশুমে নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে জেলা জুড়ে বসছে ছোটদের ফুটবলের বড়মাপের আসর। ঊনষাটটি দল। পনেরোটা গ্রুপ। প্রায় একশোটা ম্যাচ। খেলছে কমবেশি দেড় হাজার খেলোয়াড়। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কল্যাণী, হরিণঘাটা, চাকদহ, রাণাঘাট, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর মোট ষোলোটি মাঠে খেলা চলছে।

নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় জানান “এই ক’বছরে শুধু মাঠে ছেলেদের ভিড় বেড়েছে বা অভিভাবকেরা আগ্রহী হয়েছেন ফুটবলে তা নয়। প্রশিক্ষণ শিবির কেন্দ্রিক ফুটবলের সুফল হিসাবে ২০১৭ সালে রাজ্যের ফুটবল মানচিত্রে নদিয়া উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে।” আঠারোটি প্রশিক্ষণ শিবির নিয়ে শুরু হওয়া ফুটবলার গড়ার এই উদ্যোগ এখন নদিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয়।

চলতি রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরের আঁচ লেগেছে মুর্শিদাবাদেও। বিশ্বকাপের আবহে শুরু হয়ে গিয়েছে ছোটদের লিগ। বহরমপুরে গত ৭ জুন থেকে শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা ফুটবলের জুনিয়র লিগ প্রতিযোগিতা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মোট চোদ্দটি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিটি খেলা এফইউসি ময়দান এবং বহরমপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সম্পাদক জগন্ময় প্রধান জানান, “খেলার মাঠে কচিকাচাদের ফের ভিড় হচ্ছে দেখে ভাল লাগছে খুব। আন্তর্জালের ভারচুয়াল জগতের বাইরেও যে গায়ে গা লাগিয়ে খেলার একটা দুনিয়া রয়েছে, তাকে ফিরতে দেখে সত্যিই ভাল লাগছে।’’

(তথ্য সহায়তা: শুভাশিস সৈয়দ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন