হতাশ: ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসে ইয়াকুব। নিজস্ব চিত্র
সারাটা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি ইয়াকুব মণ্ডল।
মাঝেমধ্যেই বিবির কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘‘কী গো, বিহান হল নাকি?’’
ঘুম জড়ানো গলায় জাহেদা বিবি বলেছেন, ‘‘বিহান হলে ঠিক বুঝতে পারবা। এখন একটু ঘুমাও দিকি।’’
তার পরেও ঘুমোতে পারেননি ইয়াকুব। বছর পাঁচেক আগে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে দু’চোখে আঁধার নেমে এসেছিল বছর পঁয়তাল্লিশের ওই যুবকের। তারপর থেকে তাঁর কাছে দিন ও রাতের রং একই। নিকষ কালো।
শুক্রবার জাহেদাকে আর ডাকতে হয়নি। কাকভোরে পাখির কিচিরমিচির শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন ইয়াকুব। ডেকে তুলেছিলেন জাহেদা ও তাঁর তিন শিশু সন্তানকেও। তারপর সামান্য কিছু মুখে দিয়েই তিন সন্তানকে নিয়ে নাকাশিপাড়ার সেই চ্যাঙা থেকে রওনা দিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের উদ্দেশে। ইচ্ছে একটাই— মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা। কিন্তু রবীন্দ্রভবনের ভিতরে ঢুকতেই বাধা দেন পুলিশকর্মীরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা যায় না। হতাশ হয়ে সেখান থেকে সরে এসে ইয়াকুব বসেছিলেন রবীন্দ্রভবনের বাইরে চায়ের দোকানটার সামনে। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষ্ণনগরে আসার খবরটা তিনি পেয়েছিলেন বৃহস্পতিবার সকালে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, যে ভাবেই হোক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন।
ইয়াকুব বলছেন, ‘‘গ্রামেরই একজন বলল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক বার দেখা করতে পারলেই নাকি জীবনটা পাল্টে যাবে। বেঁচে যাবে সংসারটাও। তাই তো কপাল ঠুকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তো ঢুকতেই দিল না।” ওই যুবক এক সময় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বছর পাঁচেক আগে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর দু’চোখের দৃষ্টি চলে যায়। আঁধার নেমে আসে সংসারেও। স্ত্রী বেথুয়াডহরির কিসান মান্ডির ঝাড়ুদার। মাইনে মাসে সাকুল্যে দু’হাজার টাকা। সেটাই পরিবারের এক মাত্র আয়। দিনের শেষে ইয়াকুব বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে একবার অনুরোধ করতাম, ওই মাইনেটা যদি একটু বাড়ানো যায়। কিন্তু সে আর হল কই!’’
দিনভর বৃথা অপেক্ষার পরে সন্তানদের হাত ধরে ইয়াকুব যখন বাড়ি ফিরলেন তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে।