সময়মতো সতর্ক হয়নি পুলিশ। তাই মওকা বুঝে পোস্তের ফল থেকে আঠা বের করে মাদক তৈরি শুরু হয়ে গিয়েছিল ফরাক্কার চর এলাকায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কুলিদিয়ার চরে একটি বাড়ি থেকে প্রায় দু’ কিলোগ্রাম পোস্তের আঠা এবং মাদক-সহ এক তরুণকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম দেবাশিস মণ্ডল। তবে প্রধান অভিযুক্ত তার বাবা অমলকে ধরা যায়নি।
ফরাক্কা থানার আধিকারিক উদয় শঙ্কর ঘোষ জানান, গঙ্গার ওই চরে গজিয়ে ওঠা জমি ব্যক্তিগত মালিকানার নয়। তাই ওই জমি দখল করে সেখানেই জমিতে পোস্ত চাষ করেছিল দেবাশিস ও তার বাবা। সেই পোস্ত গাছে ফল ধরলে তারা নিজেদের বাড়িতে ফল থেকে আঠা বের করার কাজ চালাচ্ছিল।
বস্তুত, কুলিদিয়ার, হোসেনপুর, ব্রাহ্মণগ্রাম, নয়নসুখ প্রভৃতি এলাকায় সম্প্রতি পোস্ত গাছ নষ্ট করতে শুরু করেছে পুলিশ। প্রায় ৪০০ বিঘা জমির পোস্ত গাছ কাটা শেষ হওয়ার মুখে। বেশ কিছু পোস্ত গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। তার মধ্যেই খবর মেলে, স্থানীয় কয়েকটি বাড়িতে পোস্ত ফল থেকে আঠা বের করা হচ্ছে। পুলিশের সন্দেহ, দেবাশিসদের মতো আরও অনেকেই মাদক বের করার কাজ করছে গোপনে।
ওই এলাকায় পোস্ত চাষ নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই গঙ্গার চরে ফরাক্কায় বিঘার পর বিঘা জমিতে বেআইনি পোস্ত চাষের রমরমা দেখা যায়। একাধিকবার সেই পোস্ত গাছ কেটে নষ্ট করে ফেলেছে প্রশাসন ও পুলিশ। সারা বছর ধরে সচেতনতার প্রচার হয়েছে ওই এলাকায়। এমনই দাবি পুলিশের। তার পরেও এবার একই কায়দায় শয়ে শয়ে বিঘা জমিতে পোস্ত চাষ হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকেই কুলিদিয়ার ও হোসেনপুরে পোস্ত চাষ শুরু হলে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনাকে বহরমপুর থেকে ছুটে আসতে হয়েছিল। ক্ষুব্ধ এডিএম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে চারদিন ধরে অভিযান চালিয়ে কেটে ফেলেন সমস্ত পোস্ত গাছ। কিন্তু তার পরেও গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে পোস্ত চাষ হয়েছে এবার। চরের বালি মাটির জমিতে রীতিমতো ট্রাক্টর দিয়ে সেইসব পোস্ত চাষ করা হয়েছে। প্রকাশ্যে।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, আগে ওই সব চরের জমিতে রবিশস্য চাষ করতেন স্থানীয়রা। কিছু লোক মাস দুয়েক আগে তাঁদের ওই জমি থেকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। শিকারপুরের এক চাষির কথায় , “মাস দুয়েক আগে পোস্ত গাছগুলি বসানো হয়েছিল। তারপর সেগুলি সাদা ফুলে ভরে যায়। কোথাও কোথাও ফলও ধরতে শুরু করেছিল সে গাছে। তা থেকে আঠা বের করে মাদক হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ আগেই গাছ কেটে
ফেললে আঠা বের করার সুযোগ পেত না চাষিরা।’’