জাল টাকা পৌঁছে দিতে গিয়ে ধৃত যুবক

সন্ধ্যে সাতটা মানে বেশ অন্ধকার। পুলিশের টর্চের জোরাল আলো  তখন যাত্রীদের মুখের উপরে ঘোরাফেরা করছে। হঠাৎ আলোটা স্থির হয়ে গেল ওই যুবকের মুখের উপর।  ছুটে এলেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। 

Advertisement

বিমান হাজরা

ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৬
Share:

উদ্ধার করা জাল টাকা। নিজস্ব চিত্র

কনকনে ঠান্ডা। শীত-সন্ধ্যায় চাদরের মধ্যে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বসেছিল বছর চব্বিশের এক যুবক। ছোট গাড়িতে জনা ছয়েক যাত্রীর মধ্যে এমন ভাবে সে বসেছিল যে তাকে দেখে সন্দেহ করার মতো কোনও কারণই ছিল না। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় আচমকা ধুলিয়ান–পাকুড় রাজ্য সড়কে পুটিমারির কাছে যখন পুলিশ যাত্রীবাহী গাড়িটা থামাল তখনও বোঝা যায়নি ঠিক কী ঘটতে চলেছে। তবে পুলিশ দেখে ভয়ে মুখ শুকিয়েছিল সকলেরই।

Advertisement

সন্ধ্যে সাতটা মানে বেশ অন্ধকার। পুলিশের টর্চের জোরাল আলো তখন যাত্রীদের মুখের উপরে ঘোরাফেরা করছে। হঠাৎ আলোটা স্থির হয়ে গেল ওই যুবকের মুখের উপর। ছুটে এলেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা।

—কী নাম?

Advertisement

—কোথায় থেকে উঠেছ?

— কোথায় যাবে?

প্রশ্নবাণের বহরে ওই ঠান্ডাতেও রীতিমতো ঘামছে সেই যুবক। বিপদ বুঝে তড়িঘড়ি উত্তর দিলেন গাড়ির চালকই, ‘‘আজ্ঞে স্যর, ও লোক ডাকবাংলো থেকে গাড়িতে উঠেছে। যাবে পাকুড়।’’

পুলিশ যা বোঝার বুঝে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা বলে, ‘‘আর পাকুড় যেতে হবে না। আমাদের সঙ্গে চল।” গাড়ি থেকে তাকে নামিয়ে শুরু হল তল্লাশি। কী ঘটছে তা দেখার জন্য গাড়ি তখনও দাঁড়িয়ে। চাদরের নীচে যুবকের হাতে থাকা ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে এল কাপড় ও প্লাস্টিকে মোড়া ২০০০ টাকার নোটের পাঁচ পাঁচটি বান্ডিল। পুলিশের হাতে ধরা পড়তেই ওই যুবক তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছে।

ততক্ষণে পুলিশি অভিযানের কথা রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে আশপাশে। পাঁচ লক্ষ টাকার জাল নোট সহ ধৃত যুবককে নিয়ে শমসেরগঞ্জ থানার উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশও এই নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ১.৫ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার হল। গ্রেফতারের সংখ্যাও প্রায় ৯০ জন। ৬০ শতাংশ ঘটনাই সুতি, শমসেরগঞ্জ ও ফরাক্কা এলাকার।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত যুবকের নাম বাবর আলি (২৪)। বাড়ি শমসেরগঞ্জের কাঁকুড়িয়ায়। ওই যুবকের দাবি, সে জাল নোটের ব্যাপারে কিছুই জানত না। এক জন তাকে সেগুলি দেয়। ঝাড়খন্ডের পাকুড়ে এক জনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল তার। বিনিময়ে তার পাঁচ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। কাজের আগেই দু’হাজার টাকা সে পেয়েও গিয়েছে। মাইল পাঁচেক রাস্তা। কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। আর সামান্য এই কাজের জন্য পাঁচ হাজার টাকা পাওয়ার লোভে পড়েই এ কাজ করেছে সে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একেবারেই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান বাবর। তার তিন ছেলে আছে। রোজগার নেই সে ভাবে। তাছাড়া পুলিশ জানতে পেরেছে, বাবর নিয়মিত নেশা করে। তাই তার সামনে পাঁচ হাজার টাকার প্রলোভন আসায় সে তা এড়াতে পারেনি বলেই প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।

বাবরের বাবা রাইসুদ্দিনও রাতে ছেলে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে শুনতে পান ছেলেকে ধরে রেখেছে শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশ। রাইসুদ্দিন বলছেন, “ মদ খেয়ে গোলমাল করেছে ভেবেই ছাড়ানোর জন্য থানায় যাই। গিয়ে শুনি, জাল নোট-সহ পাকুড় যাওয়ার পথে ধরা পড়েছে ছেলে। ও নেশা করে বটে। তাই বলে জাল টাকার কারবার করবে এ কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।”

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “এই সব হত দরিদ্র ছেলেদের অর্থের লোভ দেখিয়েই তো জাল নোটের কারবার চালানো হচ্ছে। ” শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, কারা তাকে জাল নোট দিয়ে পাকুড়ে পাঠিয়েছিল তাদের নাম বলেছে বাবর। চেষ্টা চলছে তাদের ধরার।

বিধায়ক মইনুল হক বলছেন, “সীমান্তের ও পার থেকে জাল নোট এসে দেদার জমছে কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরের কয়েকটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে। আমাদের আশঙ্কা ছিলই যে, পাশের এলাকা হিসেবে এই সব চোরাপাচারের প্রভাব পড়বে ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ ও সুতিতে। মোটা কমিশনের লোভে ফাঁদে পড়বে এই এলাকার তরুণেরাও। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ভাবেই কেরিয়ার ধরা পড়লেও আড়ালে থেকে যাচ্ছে আসল কারবারিরা। তাই তাদের না ধরা পর্যন্ত জাল নোট বন্ধ হবে না।’’

তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই জেলায় এত জাল নোট ধরা পড়ে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেকেরই নাম পায় পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাবর আলিরা প্রলোভনে পা বাড়াতেই থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন