পেটের টানেই অব্যাহত সেনা হওয়ার দৌড় 

সেনার চাকরিতে রয়েছে ঝুঁকি রয়েছে অনেক। রয়েছে মৃত্যু ভয়। তা জেনেও সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে পিছপা নন তেহট্ট মহকুমার অনেক যুবক।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

তেহট্ট শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে জঙ্গি ঘাঁটিতে বোমা বর্ষণ করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। মঙ্গলবার ভোরের সেই ঘটনায় সাড়া পড়েছে গোটা দেশে। সকাল থেকে সেই খবরে মুখর সংবাদমাধ্যম। খবর পৌঁছেছে সীমান্তেও। আর ভারতের সেই সাফল্যে মনোবল বেড়ে গিয়েছে সীমান্তের যুবকদের। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে তাঁদের মনে আরও বেশি ‘জোশ’ এনেছে ওই ঘটনা।

Advertisement

করিমপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, করিমপুর রামকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দা সুকান্ত দত্ত যেমন বলছেন, ‘‘সেনাতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা বহু দিনের। সে জন্য রোজ অনুশীলন করছি। তবে মঙ্গলবার পাকিস্তানকে সমুচিত জবাব দেওয়ার ঘটনাটি আমাদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’’

সেনার চাকরিতে রয়েছে ঝুঁকি রয়েছে অনেক। রয়েছে মৃত্যু ভয়। তা জেনেও সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে পিছপা নন তেহট্ট মহকুমার অনেক যুবক। তেহট্ট, বেতাই, পলাশিপাড়া কিংবা করিমপুরের বিভিন্ন রাস্তায়-মাঠে চোখ রাখলে প্রতিদিন সকালে অনেক যুবককে শারীরিক অনুশীলন করতে দেখা যায়। তাঁদের কেউ যেমন পরিবারের কথা ভেবে সেনা বাহিনীতে যেতে চান আবার অনেকেরই রয়েছে সেনা হওয়ার ইচ্ছে।

Advertisement

হোগলবেড়িয়ার দুর্লভপুরের বছর পঁচিশের যুবক কার্তিক হালদার জানান, বেশ কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েছেন। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেও শারীরিক পরীক্ষায় বাদ পড়েছেন। তার পরেও নিয়মিত শরীরচর্চা করছেন শুধুমাত্র সেনায় যোগ দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘‘জমি জায়গা তেমন নেই। অভাবের কারণে মাধ্যমিকের পর আর পড়তে পারনি। বছর পাঁচেক আগে থেকে সেনা বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। মনে দেশপ্রেম যেমন আছে তেমনই সংসারের হাল ধরাও জরুরি।’’

২০১৭ সালের এপ্রিলে ছত্রিশগড়ের সুকমায় মাওবাদীদের বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন ২৬ জন সিআরপিএফ জওয়ান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন করিমপুরের অভয়পুরের অরূপ কর্মকার (২৫)। ৫১তম জন্মদিনে ২০১৮ সালে ৩ জানুয়ারি কাশ্মীরের সাম্বা সেক্টরে পাকিস্তানি সেনার গুলিতে মৃত্যু মারা যান নাজিরপুরের বিএসএফ জওয়ান রাধাপদ হাজরা। ২৮ নম্বর রাজপুত ব্যাটেলিয়ানের সেনা জওয়ান ছিলেন পলাশিপাড়ার পাঁচদাঁড়া গ্রামের অভিজিৎ মণ্ডল। ৭ মার্চ ২০১৮ মণিপুরে কর্তব্যরত অবস্থায় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তাঁর। গত বছরের শেষে ৮ ডিসেম্বর একই ভাবে কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনার গুলিতে মারা যান হোগলবেড়িয়ার বালিয়াশিশার প্রসেনজিৎ বিশ্বাস (২৭)। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত ৪৯ জন জওয়ানের মধ্যেও ছিলেন পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়ার যুবক সুদীপ বিশ্বাস।

এলাকার এত সেনার মৃত্যুর খবরেও ছেদ পড়েনি সেনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছায়। করিমপুরের স্নাতক যুবক গৌরব মুখোপাধ্যায়-সহ আরও প্রায় এক ডজন যুবক প্রতিদিন সকালে এলাকার স্থানীয় রেগুলেটেড মার্কেট মাঠে দৌড় ও ব্যায়ামের অনুশীলন করেন। তাঁদের সকলেই সেনায় নিযুক্ত হতে চায়। গৌরবের কথায়, “আমাদের আত্মীয়দের মধ্যে বেশ কয়েকজন সেনা বাহিনীতে কাজ করেছেন। তাদের দেখে খুব ছোট থেকেই সেনা জওয়ান হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। মিলিটারি, বিএসএফ, সিআরপিএফ যে কোনও বিভাগে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। গত চার বছর থেকে সেই চেষ্টাই করছি।”

সেনা বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে হাঁসপুকুরিয়ার সদ্য নিহত সিআরপিএফ জওয়ান সুদীপ বিশ্বাসের নাবালক ভাইপো সঞ্জু বিশ্বাসও। সেই শ্মশানে সুদীপের মুখাগ্নি করেছে। বছর পনেরোর বয়সী এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সঞ্জু জানায়, “আমি বড় হলে কাকুর মতো সেনায় যোগ দেব। কাকুর মৃত্যুর বদলা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন