এতদিন আলুর বীজের জন্য নির্ভর করতে হত ভিন্ রাজ্যের উপর। আবার বীজ পেলেও তার গুণগত মান যে সবসময় ভাল হয় তাও নয়। দামও চড়া। তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে চাপা আক্ষেপ থেকেই গিয়েছিল। অবশেষে চাষির সুবিধার কথা ভেবে আলু বীজ উৎপাদন শুরু করল নদিয়ার মোহনপুর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
সোমবার কল্যাণী লেক হলে দিনভর আলুর বীজ উৎপাদন নিয়ে এক কর্মশালা ও সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। শিবিরে নদিয়া জেলা ছাড়াও হুগলি, বর্ধমান, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকটি সমবায় সমিতির কর্মকর্তা ও কৃষক ওই সভায় যোগ দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য বিশ্বপতি মণ্ডল, সম্প্রসারণ বিভাগের অধিকর্তা দেবব্রত বসু, ফার্ম অধিকর্তা দীপক ঘোষ-সহ অনান্যরা ওই সভায় বক্তব্য রাখেন। সেখানেই আলুর বীজ উৎপাদনের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে গত বছর থেকে কল্যাণীর তিনটি ফার্মে জ্যোতি আলুর বীজ উৎপাদন শুরু হয়েছে। উৎপাদিত বীজের পরিমাণ ১২০ টন। আগামীতে সেটা ২৫০ টনে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বিশ্বপতিবাবু বলেন, “রাজ্যের কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে আলুর বীজ তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। গত বছর থেকে সেই কাজ শুরু হয়েছে। আমরা যে বীজটা তৈরি করেছি সেটির গুণগত মান তুলনায় ভাল। কৃষকদের তা চাষ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।” তিনি জানান, বীজের দাম এখনও ঠিক হয়নি। তবে অনান্য রাজ্য থেকে আনা বীজের থেকে দাম কম হবে। উৎপাদিত বীজের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সেই কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা নিয়ে কৃষি সমবায় ও কৃষকদেরও আলু বীজ উৎপাদনের জন্য বলা হয়েছে।
বর্তমানে রাজ্যে ১০ লক্ষ টন আলু বীজের প্রয়োজন রয়েছে। এর বেশির ভাগটাই আনা হয় পঞ্জাব থেকে। কিছুটা আনা হয় উত্তরপ্রদেশ থেকে। রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয় হুগলি জেলায়। এছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে আলু চাষ হয়। হুগলি জেলার পুরশুড়া নিমডাঙ্গী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির হিসাবরক্ষক রঘুনাথ দাস বলেন, “সমবায়ে ১২০০ জন সদস্য রয়েছেন। প্রায় ১৭০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ হয়। আমরা পঞ্জাব থেকে আলুর বীজ নিয়ে আসি। এখান থেকেই যদি ভাল বীজ পাওয়া যায় তাহলে সেই বীজ নিয়ে চাষ করতে আপত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা পেলে আমরা আলুর বীজ উৎপাদন করতেও রাজি আছি।”
সম্প্রতি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের এক অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের কৃষি ও কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “আমরা চাই রাজ্যে আলুর বীজ উৎপাদন করতে। সেই মতো এই বিশ্ববিদ্যালয় আলুর বীজ তৈরির কাজ শুরু করেছে। যেটা গুণে ও মানে বেশ ভাল। চাষিরা লাভবান হবেন।”