উদ্বেগ কাটছে না ভক্তবালার ‘প্রতারিত’ পড়ুয়াদের, ক্ষোভ

শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজের ভুক্তভোগী পড়ুয়াদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ওই পড়ুয়াদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু অন্য পরীক্ষার্থীদের মতো তাঁদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না এখন। ফলে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার পরও ওই পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধুবুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৫
Share:

শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজের ভুক্তভোগী পড়ুয়াদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ওই পড়ুয়াদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু অন্য পরীক্ষার্থীদের মতো তাঁদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না এখন। ফলে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার পরও ওই পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না।

Advertisement

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলুর আশ্বাস, “ঠিক সময়ে ওই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ওদের পাশেই আছে। হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই।” কিন্তু এনসিটিই-র পূর্বাঞ্চলীয় জোনের অধিকর্তা চন্দ্রপিডা নিলাপ স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত পড়ুয়াদের পরীক্ষার ব্যাপারে আমাদের লিখিত ভাবে কিছু জানায়নি। তাছাড়া আমরা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে একই কলেজে একশো জনের বেশি পড়ুয়াকে পরীক্ষায় বসার অনুমতিও দেব না।”

এনসিটিই-র নিয়ম ভেঙে ভক্তবালা বিএড কলেজ ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে একশো জনের পরিবর্তে ১৩৯ জন পড়ুয়াকে ভর্তি নেয়। পরে তাদের রেজিস্ট্রেশন করাতে গিয়ে সমস্যা হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তোপ দাগেন, তৃণমূল ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাপেই অতিরিক্ত পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। ভর্তির নামে হাজার-হাজার টাকা তোলা আদায়ের অভিযোগও ওঠে। যা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। চাপে পড়ে ভুক্তভোগীদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও পরীক্ষার্থীদের কোনও অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়নি।

Advertisement

পরীক্ষা শুরুর মাত্র দু’দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়, পরীক্ষার্থীরা নিজের দায়িত্বে পরীক্ষা দেবেন। লিখিত পরীক্ষা শেষ হতেই অতিরিক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। কারণ, ওই ছাত্র-ছাত্রীরা একাধিকবার তাঁদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার ব্যাপারে জানতে চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ আঁটেন। কোনও আশ্বাস মেলেনি কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক অমর বিশ্বাসের তরফেও।

ভুক্তভোগী পড়ুয়া সঞ্জয়কুমার মজুমদারের ক্ষোভ, ‘‘বৈধ একশো জনের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা হলেও আমাদের কিছুই জানানো হচ্ছিল না। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়— কেউ আমাদের পাত্তা দিচ্ছে না।’’ ভুক্তভোগী পড়ুয়াদের মধ্যে ১৭ জন অগস্ট মাসের ৪ তারিখে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক পার্থসারথী দে-র কাছে তাঁদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন জানান।

পড়ুয়াদের অভিযোগ, ‘‘সব শোনার পরেও পরীক্ষা নিয়ামক কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করেননি।” এরপর ২২ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী পড়ুয়াদের একাংশ পুনরায় পরীক্ষা নিয়ামকের কাছে একই মর্মে আবেদন করেন। গত সোমবার জনাকয়েক পড়ুয়া কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক ও উপাচার্যের সঙ্গে দেখাও করেন। পরীক্ষার্থী মনু রায়ের বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষা নিয়ামক এই ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করছেন। কখনও বলছেন বিষয়টি এনসিটিই-র বিচারাধীন। কখনও আবার বলছেন কলেজ কর্তৃপক্ষই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।”

মঙ্গলবার ভুক্তভোগী জনা কুড়ি পড়ুয়া চাপড়ার তিলকপুরের এক কলেজে যান। সেখানে তখন চলছিল ভক্তবালার বৈধ একশো জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে আর্ট ও ওয়ার্ক এডুকেশন রয়েছে যাঁদের, তাঁদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা। বিএড কলেজের তরফে অমর বিশ্বাস ভিতরেই ছিলেন। অনেক কাকুতি-মিনতি সত্ত্বেও পড়ুয়াদের সামনে আসেননি অমরবাবু। ঘণ্টাখানেক পর চাপড়া থানার জনাকয়েক পুলিশকর্মী আসেন। পুলিশের সামনেই গেটের ভিতর থেকে অমরবাবু বিক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কথামতো পরীক্ষা নেওয়া হবে। দিন কয়েকের মধ্যেই পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হবে।”

কবে সেই পরীক্ষা হবে? প্রশ্ন করে করে হতাশ পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন