সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতি

কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে বাজেট পাশ তৃণমূলের

তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বাজেট পাশ হয়নি এক বছরেও। অবশেষে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে পাশ হল মুর্শিদাবাদের তৃণমূল পরিচালিত সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির খসড়া বাজেট। সাগরদিঘির বিধায়ক, তৃণমূল মন্ত্রী সুব্রত সাহার সঙ্গে দলের একাংশের বিরোধ দীর্ঘ দিনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বাজেট পাশ হয়নি এক বছরেও। অবশেষে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে পাশ হল মুর্শিদাবাদের তৃণমূল পরিচালিত সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির খসড়া বাজেট।

Advertisement

সাগরদিঘির বিধায়ক, তৃণমূল মন্ত্রী সুব্রত সাহার সঙ্গে দলের একাংশের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মহম্মদ আলির (মধু) নেতৃত্বে দলেরই আট পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সরাসরি মন্ত্রী সুব্রত সাহার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করায় প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও আর্থিক বাজেট পাশ করাতে পারেনি এই পঞ্চায়েত সমিতি।

এই অবস্থায় মঙ্গলবার কংগ্রেসের ১০ সদস্যের সমর্থন নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির খসড়া বাজেট পাশ হওয়ার পর সুব্রতবাবুর সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ নিয়ে ফের সরব হয়েছে মহম্মদ আলির গোষ্ঠী। দফতরহীন মন্ত্রী সুব্রত সাহা অবশ্য বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থে মিলেমিশে কাজ করার জন্যই সকলকে নিয়ে চলতে চাই আমরা। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই এটুকু বলতে পারি। দলের ব্লক কমিটির নেতারা কী বলছেন জানি না। আমি দলের ভিতরের কথা বাইরে কাউকে বলি না। তবে এটুকু জানি দলেরই ১০ সদস্য সভায় হাজির হননি।”

Advertisement

গত বছর ৩৩ সদস্যের সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৭ জনের সমর্থনে বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। কিন্তু একজোট হতে পারেনি তারা। পঞ্চায়েত সমিতি গঠন নিয়ে সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহার সঙ্গে গোলমাল বাধে ব্লক সভাপতি মধুর। তাঁর অনুগামী দুই পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির আট সদস্য দলেরই নিয়ন্ত্রণে থাকা সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতিকে কার্যত বয়কট শুরু করেন। দুই গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি নেই। পরিস্থিতি এতটাই তিক্ত ছিল যে লোকসভা নির্বাচনে দুই গোষ্ঠীকে সামলাতে পৃথক ভাবে প্রচারে নামাতে বাধ্য হন জঙ্গিপুরের প্রার্থী শেখ নুরুল ইসলাম। এমনকী ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে সাগরদিঘি থানার সামনে মন্ত্রী সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে জমায়েত করে মন্ত্রীর কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। লোকসভা ভোটের পরে গত ২৭ মে সুব্রতবাবুর দফতর কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় সাগরদিঘিতে ব্লক কমিটির নেতারা প্রকাশ্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লাড্ডু বিলি করেন।

তিক্ত এই পরিবেশে সাগরদিঘির বাজেট পাশ হচ্ছিল না কিছুতেই। বিডিও দেবব্রত সরকার জানান, সাংসদ, বিধায়ক, প্রধান-সহ সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ৪৮। এর আগে দু’বার সভা ডাকা হলেও অর্ধেকের বেশি সদস্যের সমর্থন না পাওয়ায় পাশ করানো যায়নি খসড়া বাজেট। মঙ্গলবার ২৫ জন সদস্য হাজির থাকায় খসড়া বাজেট পাশ করানো গিয়েছে। ২১ দিন পর আবার আর একটি সাধারণ সভা ডেকে একই ভাবে অর্ধেকের বেশি গরিষ্ঠতায় পাশ করাতে হবে পূর্ণাঙ্গ বাজেট।

এ দিন বাজেট পাশের পরে ব্লক সভাপতি মহম্মদ আলি বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতি বাঁচাতে কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে সোমবার রাতে ইটোর গ্রামে সভা করেছেন সুব্রতবাবুর অনুগত বহরমপুরের নেতারা। বহরমপুরে কংগ্রেসকে জেতানোর পুরস্কার হিসেবে সাগরদিঘিতে তৃণমূলকে সমর্থন করেছে কংগ্রেস। এই অশুভ বোঝাপড়ায় সাগরদিঘিতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই নয়, কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।” কিন্তু বাজেট পাশ না করিয়ে নিজেরই দল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির কী ক্ষতি করছিলেন না তিনি? মহম্মদ আলির জবাব, “ওই পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের সময় আমাদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ করা হয়নি। তাই পঞ্চায়েত সমিতির দায় নিতে পারব না আমরা।”

কংগ্রেস সমর্থন করল কেন?

পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের দাউদ মণ্ডল বলেন, “বাজেট পাশ না হওয়ায় উন্নয়ন বন্ধ। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিও ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। তাই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির বাজেট প্রস্তাবকে সমর্থন করেছি দলের নির্দেশে।” কংগ্রেসের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, “সাগরদিঘিতে তৃণমূলের তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। এই অবস্থায় উন্নয়নের স্বার্থে খসড়া বাজেটকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন