কটূক্তির প্রতিবাদে ক্লাস বয়কট ছাত্রীদের

প্রতিবাদ করলেই শাসক দলের ধমক অব্যাহত। যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে চাকদহের রাজারমাঠ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ক্লাস বয়কট করে গত বৃহস্পতিবার। অভিযোগ, বয়কট তুলতে তৃণমূল পরিচালিত ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক গোপালচন্দ্র রায় ছাত্রীদের উদ্দেশে কটূ মন্তব্য করেন। বয়কট তছনছ করতে বিদ্যালয় চত্বরে পুলিশও ডাকেন গোপালবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪৮
Share:

পোস্টার হাতে প্রতিবাদ ছাত্রীদের। —নিজস্ব চিত্র।

প্রতিবাদ করলেই শাসক দলের ধমক অব্যাহত। যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে চাকদহের রাজারমাঠ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ক্লাস বয়কট করে গত বৃহস্পতিবার। অভিযোগ, বয়কট তুলতে তৃণমূল পরিচালিত ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক গোপালচন্দ্র রায় ছাত্রীদের উদ্দেশে কটূ মন্তব্য করেন। বয়কট তছনছ করতে বিদ্যালয় চত্বরে পুলিশও ডাকেন গোপালবাবু। এর প্রতিবাদে শুক্রবার পড়ুয়ারা সম্পাদকের পদত্যাগ দাবি করে পুনরায় ক্লাস বয়কট করে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা থেকেই ওই স্কুলের কয়েকশো পড়ুয়া ক্লাসে না ঢুকে যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়। তারা ক্লাস বয়কট করে রাস্তায় নামে। আন্দোলনকে ভেঙে দিয়ে ছাত্রীদের ক্লাসমুখো করতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা গোপালবাবুকে ডাকেন। অভিযোগ, দলবল জুটিয়ে গোপালবাবু ছাত্রীদের নানা ভাবে হুমকি দেন। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ববিন দাস বা একাদশ শ্রেণির মৌমিতা হালদারদের অভিযোগ, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে আমরা ক্লাস বয়কট করি। পরিচালন সমিতির সম্পাদক আমাদের জোর করে ক্লাসে ঢোকান। তিনি আমাদের কুকুর বলেও সম্বোধন করেন। আমরা ওঁর কথা না শোনায় বিদ্যালয়ে পুলিশও ডাকেন।”

ওই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন ছাত্রীরা ক্লাসে আসেনি। দুপুর নাগাদ স্কুলে গিয়ে কোনও পড়ুয়ার দেখা মিলল না। চাকদহ শহর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরের এই স্কুলে এ দিন কেবল জনাকয়েক শিক্ষিকা বাদে আর কাউকেই দেখা যায়নি। হাঁড়ি চড়েনি মিড-ডে মিলেরও। যে কয়েকজন ছাত্রীর দেখা পাওয়া গেল তাদের হাতে বিভিন্ন রকমের স্লোগান সম্বলিত পোস্টার। সেখানে লেখা রয়েছে: “গোপালচন্দ্রের অপসারণ জরুরি।” এছাড়াও বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রতিবাদে স্কুল চত্বর জুড়ে ফ্লেক্স, ব্যানারের ছড়াছড়ি।

Advertisement

ক্ষুব্ধ এক ছাত্রীর কথায়, “দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।” স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা স্বপ্না আঢ্য অবশ্য এই অবস্থান-বিক্ষোভ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তাঁর কথায়, “স্কুলে কোনও ঘটনা ঘটেনি। এখন স্কুলের বাইরে রয়েছি। কিছু বলতে পারব না।” যাঁকে ঘিরে এত অভিযোগ সেই গোপালবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে বলছেন, “আমি স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে বাজে কথা বলিনি। সিপিএম ওই ছাত্রীদের রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে।” সিপিএমের বিষ্ণুপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক অসীম রায় সাফ বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে গা-জোয়ারি শাসকদলের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা কাউকে আন্দোলনে মদত দিইনি।”

রাজনৈতিক তরজা, আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের মধ্যে কবে স্কুলের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। এ ব্যাপারে জেলা বিদ্যালয় পরিদশর্ক (মাধ্যমিক) কৌশিক রায় আবার কিছুই জানেন না। তাঁর মন্তব্য, “আমি এখনও পর্যন্ত কিছুই জানি না। তবে বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন