এ ভাবেই অনাদরে এক মাত্র খেলার মাঠ। ছবি কল্লোল প্রামাণিক।
স্টেডিয়াম তৈরি হোক
করিমপুর ১ ও ২ ব্লকের চারটি থানার (করিমপুর, হোগলবেড়িয়া, মুরুটিয়া ও থানারপাড়া) মধ্যে করিমপুর রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি খেলার মাঠ। করিমপুরের খেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন একটি স্টেডিয়ামের খুব দরকার। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, ক্রীড়া দফতর ও প্রশাসন এই স্টেডিয়াম তৈরির জন্য এগিয়ে এলে এলাকার মানুষ খুশি হবেন। এমন নয়, যে স্টেডিয়াম তৈরির জন্য নতুন জমি নতুন কিনতে হবে। করিপুর এলাকাতেই অনেক সরকারি জমি রয়েছে। তার মধ্যে কোনও একটিতেই অনায়াসেই একটি স্টেডিয়াম তৈরি করা যেতে পারে। আমার প্রস্তাব, সেক্ষেত্রে কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে করিমপুর রেগুলেটেড মার্কেটেও তা করা যেতে পারে। এই মার্কেট এলাকা থেকে ঢিল ছোড়া দূরে রয়েছে দমকল, থানা, হাসপাতাল, হোটেল, লজ, বাসস্ট্যান্ড, খাবার জায়গা, জিমখানা, স্কুল, কলেজ, রেস্তোরা।ঁ এই মাঠেই কাকভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকার সব বয়সের মানুষ শরীরচর্চা করতে আসেন। প্রতিদিন খেলার পাশাপাশি বছরভর চলে সিএবি পরিচালিত সাব ডিভিশনাল ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প, ফুটবল লিগ ও বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান। স্টেডিয়ামের সঙ্গে এই মাঠটিতে উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সৌমিক সরকার, লক্ষ্মীপাড়া
খেলাকে বাঁচান
আনন্দবাজার পত্রিকার নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ সংস্করণে প্রকাশিত ‘আমার শহর’-এ ‘আবেগে ভর করেই চলছে করিমপুরের খেলাধুলা’ প্রতিবেদনটি আজকের দিনে অত্যন্ত বাস্তব ও সময়োপযোগী। একটা সময়ে যে করিমপুর শুধুমাত্র খেলা দিয়েই নিজেকে পরিচিত করেছিল সবার সামনে, আজ সেই করিমপুরের খেলার মান ও গুরুত্ব প্রায় শেষের দিকে। খেলার এই দুরাবস্থার জন্য বেশ কিছু কারণও রয়েছে। বর্তমানে করিমপুরে কোন ক্লাবেরই নিজস্ব খেলার মাঠ নেই। করিমপুর জগন্নাথ স্কুলের মাঠ স্কুল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখানে নিকাশি ব্যবস্থা না থাকার ফলে বর্ষাকাল এলেই মাঠে জল জমে যায়। এলাকার প্রধান ও একমাত্র মাঠ বলতে করিমপুর রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠ। সরকারি এই মাঠে স্থায়ী ভাবে কোনও কাজও করা যায় না। যেমন ক্রিকেট খেলার জন্য উপযোগী কংক্রিট পিচ তৈরি করা যাচ্ছে না। ক্লাবের নিজস্ব মাঠ হলে পিচ তৈরিতে কোনও অসুবিধা থাকত না। এই মাঠটিকেও বাঁচিয়ে রাখতে কারও কোনও উদ্যোগও সে ভাবে চোখে পড়ে না। মার্কেটের মাঠের সবুজ হারিয়ে গেলে এলাকার মানুষের অক্সিজেন নেওয়ার জায়গাটুকুও থাকবে না। বর্তমানে বছরের একদিন ঘটা করে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেই দিনটি ছাড়া অন্য কোনওদিন ছাত্র ও ক্রীড়া শিক্ষকদের মাঠে সে ভাবে দেখাই যায় না। এমন একটা অবস্থায় খেলাকে বাঁচাতে অভিভাবক, স্কুল শিক্ষক, এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ ও সরকারকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।
জামাতুল ইসলাম, দোগাছি
সোনালি অতীত
করিমপুরের খেলাধুলা সম্পর্কে অনেক কথা অজানা রয়ে গিয়েছে নতুন প্রজন্মের কাছে। ১৭ ফেব্রুয়ারির আনন্দবাজার পত্রিকায় করিমপুরের খেলার ইতিহাস ও বর্তমান সমস্যা নিয়ে প্রকাশিত লেখার প্রশংসা করছি। তবে আমার স্মৃতি থেকে এলাকার আরও কিছু কথা জানাচ্ছি। কয়েক দশক আগে ক্রীড়া জগতে জেলা ও রাজ্য স্তরে যাঁরা করিমপুরের নাম উজ্জ্বল করেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফুটবলে নতিডাঙ্গার দেবব্রত মৈত্র, দোগাছির জামাতুল ইসলাম, শিকারপুরের প্রয়াত গৌর মণ্ডল, দিব্যেন্দু মণ্ডল, সুরজিৎ সরকার ও রাজু সরকার। তেমনি ক্রিকেটেও সুখেন সরকার, দেবেশ রায়, পরেশ জৈন, উৎপল ভট্টাচার্য, দেবব্রত সরকার, পবন জৈন ও আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখযোগ্য। করিমপুরের ক্রিকেট খেলার কথা বলতে গেলে যাঁর নাম সর্বপ্রথমেই আসা উচিত, তিনি প্রবীর সাহা। তাঁর অবদান এলাকার ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ কোনওদিন ভুলতে পারবেন না। প্রবীরবাবুই এলাকার ক্রিকেট খেলাকে বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিত করতে পেরেছিলেন। সেই সময় ক্রিকেট খেলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় ভার বহন করেছে যে পরিবার, সেই জৈন পরিবারের অবদানও অনস্বীকার্য। ওই সাহায্য না পেলে করিমপুরে খেলার পথ হয়তো সেদিনই বন্ধ হয়ে যেত।
জয়লাল শেখ, রামকৃষ্ণপল্লি
আজও স্থায়ী মঞ্চ নেই
করিমপুরের পাশাপাশি যমশেরপুর, ধোড়াদহ, শিকারপুর, ফুলবাড়ির মতো গ্রামগুলোতেও নাট্যচর্চার একটা পরিবেশ ছিল। নানা সমস্যার কারণে এখন সে সব ইতিহাস। সারাটা জীবন নাটক নিয়েই মেতেছিলেন এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। যমশেরপুরের অজিত চৌধুরী, চন্দনা রায়, ধোড়াদহ গ্রামের তারাপদ স্যান্যাল, ঋষিপদ ঘোষ, নন্দদুলাল ঘোষ, শিকারপুরের সন্তোষ প্রামাণিক, দিবাকর ভৌমিক, সমর মল্লিক কিংবা করিমপুরের অনিল সাহা, করুণা সাহা, অভিমন্যু মণ্ডল, রঞ্জন সাহা, অনুপ বিশ্বাস, সোমেন বিশ্বাসের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ছাত্রাবস্থায় দেখেছি করিমপুরের অরুণ চট্টোপাধ্যায়কে ‘রানার গোষ্ঠী’ নিয়ে নাটক করতে। বছর চারেক আগে তাঁরই নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছে ‘ক্যাপ্টেন হুররা’। এখন অসুস্থতার কারণে তিনি আর নাটক করতে পারেন না। ১৯৮৩ সালে বুলিদার নির্দেশনায় ‘কালের যাত্রা’ দিয়ে শরৎ স্মৃতি নাট্য সংস্থার পথ চলা শুরু হয়েছিল। সেই নাটকে ভাল অভিনয় করে অসীম নাথ, অনুপ বিশ্বাস, শ্যামল পোদ্দার, বিভাস সাহা, মলয় বিশ্বাস, সজল বাগচি, প্রলয় চট্টোপাধ্যায় সুনাম অর্জন করেছিলেন। এত বছর ধরে কষ্ট করে শরৎ স্মৃতি নাট্য সংস্থার নিজস্ব একটা জমি হয়েছে। কিন্তু আজও একটা স্থায়ী মঞ্চ নেই আমাদের। ভাবতে কষ্ট হয় ৩১ বছরের পুরনো এই সংস্থা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বহু বার জানিয়েও আজ পর্যন্ত এলাকার বিধায়ক বা সাংসদ তহবিলের কোনও রকম সাহায্য আমরা পাইনি। সরকারের কত টাকাই তো কত ভাবে খরচ হয়, আমাদের দিকেও কি একটু নজর দেওয়া যেত না! তবে প্রতি বছর আমাদের নাট্যোৎসবের জন্য এলাকার সকলেই যে ভাবে আমাদের সহযোগিতা করেন, পাশে দাঁড়ান তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
দেবপ্রসাদ স্যান্যাল, শরৎ স্মৃতি নাট্য সংস্থার সম্পাদক