জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জন কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
গণ্ডগোল ছাড়াই জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখল কৃষ্ণনগর। শেষ কবে এমনটা হয়েছে মনে করতে পারছেন না শহরবাসী। পুলিশ-প্রশাসনের কড়া মনোভাবেই এমনটা সম্ভব হল বলে মনে করছেন তাঁরা। কৃতিত্বের ভাগ নিতে দ্বিধা করছে না নদিয়া জেলা পুলিশও।
মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু হয়েছিল কৃষ্ণনগরে। বিভিন্ন পাড়ার বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলির মধ্যে প্রতি বছরই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াই চলে। এলাকার ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা তাগিদও থাকে। প্রতি বছর বিসর্জনের শোভাযাত্রা চলাকালীন একাধিক বারোয়ারি মুখোমুখি হলেই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ব্যতিক্রম শুধু এবার। শহরের প্রবীণ নাগরিক ও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রীয় উৎসব কমিটির কার্যকরী সভাপতি ব্যাসদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শেষ কবে এমন ভাবে কোনও রকম গণ্ডগোল ছাড়াই প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে আমরা মনে করতে পারছি না।”
এমনটা হল কী ভাবে?
পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, এ বার অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিত ভাবে ভাসানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলির মিটিংয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পুজো মিটে যাওয়ার পরেও যারা গণ্ডগোল করবে তাদের ভিডিও ক্যামেরার ছবি দেখে শনাক্ত করা হবে। সেই মতো রাজবাড়ি থেকে নিরঞ্জন ঘাট পর্যন্ত শোভাযাত্রার রাস্তার দু’ধারে বাড়ির উপরে ৩০টি ভিডিও ক্যামেরা বসানো হয়েছিল।
এ ছাড়া সম্প্রতি কালীপুজোর ভাসানে গণ্ডগোল করার জন্য একটি বারোয়ারির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। সেই বারোয়ারিকে ভবিষ্যতে আর পুজোর অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এই পদক্ষেপ অন্য পুজো কমিটিগুলিকে সতর্ক করে দেয়।
বহরমপুরে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। গৌতম প্রামাণিকের ছবি।
সম্প্রতি কৃষ্ণনগরের বেলেডাঙা মোড়ে দুষ্কৃতীদের গণ্ডগোলে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর পরে পুলিশ শহরের বেশ কয়েকজন সমাজবিরোধীকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও দুর্গাপুজোর পর কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর ও নবদ্বীপ শহরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে এগারো হাজার সমাজবিরোধীকে সতর্কতামূলক ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে ভাসানে গণ্ডগোল পাকানোর মতো লোক বিশেষ ছিল না।
এর মধ্যেও হাতারপাড়ার বারোয়ারির সদস্যরা জোর করে সামনের প্রতিমাকে অতিক্রম করতে চাইলে তাদের উপরে সামান্য লাঠি চালায় পুলিশ। লাঠি চালানো হয় বাঘাডাঙার উপরেও। ঘটনা বলতে এটাই। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সেটা ঠিকঠাক ভাবে বাস্তবায়িত হওয়ায় প্রথম দিনের ভাসান শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। আমরা বারোয়ারি কমিটিগুলিকেও ধন্যবাদ দিচ্ছি সহযোগিতা করার জন্য।’’
সোমবার দ্বিতীয় ভাসানের দিন। দেখা যাক ওই পরীক্ষাতেও পুলিশ-প্রশাসন পাশ করতে পারে কিনা।