গুন্ডাগিরি, ফরাক্কায় বন্ধ সেতুর কাজ

গুন্ডাগিরি আর সিন্ডিকেট চক্রে অতিষ্ঠ হয়ে ফরাক্কায় কাজ বন্ধ করে দিলেন এনটিপিসি-র জন্য সেতু তৈরি করতে আসা একটি বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থা। ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরাক্কায় ফিডার ক্যানেলে গঙ্গার উপর এই সেতু তৈরি করছে এনটিপিসি। দীর্ঘ তিন দশক ধরে ফরাক্কায় তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালালেও এতদিন নিজস্ব কোনও সেতু ছিল না। ফরাক্কা ব্যারাজের তৈরি সেতুটি তারা ব্যবহার করত।

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৪ ০০:৪৪
Share:

গুন্ডাগিরি আর সিন্ডিকেট চক্রে অতিষ্ঠ হয়ে ফরাক্কায় কাজ বন্ধ করে দিলেন এনটিপিসি-র জন্য সেতু তৈরি করতে আসা একটি বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থা।

Advertisement

৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরাক্কায় ফিডার ক্যানেলে গঙ্গার উপর এই সেতু তৈরি করছে এনটিপিসি। দীর্ঘ তিন দশক ধরে ফরাক্কায় তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালালেও এতদিন নিজস্ব কোনও সেতু ছিল না। ফরাক্কা ব্যারাজের তৈরি সেতুটি তারা ব্যবহার করত। সম্প্রতি সেই সেতুটিকে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ বিপজ্জনক ঘোষণা করায় নিজেরা সেতু তৈরি করছে। দু’বছরের মধ্যে নতুন সেতুর কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ছ’মাস কেটে গেলেও সেতুর কাজ ১০ শতাংশও এগোয়নি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি সংস্থাটি কলকাতার। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু ঠিকাদার কাজ করতে চেয়ে প্রথম থেকে গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। কয়েকজনকে কাজ দিয়েও ঝামেলা মেটানো যায়নি। এখন ইচ্ছে মতো হাঁকা দরে বালি, সিমেন্ট, লোহা, ইট-সহ যাবতীয় মালপত্র তাদের কাছ থেকে নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছে ওই ঠিকাদাররা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্থার এক প্রজেক্ট ম্যানেজারকে মারধর করেছিল স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী। তিনি প্রাণ ভয়ে ফরাক্কা ছেড়ে চলে যান। পরে গোলমাল মেটাতে হস্তক্ষেপ করেন ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক। স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে তখনকার মতো বিরোধ মিটিয়ে নেওয়া হলেও গণ্ডগোল চলছেই। বৃহস্পতিবার দুপুরেও সংস্থার এক সুপারভাইজরকে মারধর করে স্থানীয় একদল মস্তান। আর এক জন আধিকারিক খুনের হুমকি পেয়ে পরদিনই কাজের জায়গা ছেড়ে পালিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর কলকাতা থেকে আসা কর্মীরা কেউই কাজ করতে চাইছেন না। শুক্রবার থেকে কাজ বন্ধ।

Advertisement

ঠিকাদারি সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে প্রতিবারই লিখিত ভাবে থানায় অভিযোগ করার পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সংস্থার পক্ষ থেকে সরাসরি হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় বলা না হলেও পিছনে কংগ্রেসের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের ফরাক্কা ব্লকের সভাপতি সোমেন পাণ্ডে বলেন, “স্থানীয় কংগ্রেসের মদতপুষ্ট একদল লোক ফরাক্কায় ঠিকাদারির নামে অবাধে তোলাবাজি চালাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত এই ধরণের মস্তানবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”

গণ্ডগোল হয়েছে মেনে নিলেও এর সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ আছে বলে মানতে চাননি ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক। তিনি বলেন, “মাস চারেক আগে ওখানে কিছু সমস্যা হয়েছিল। ওই ঠিকাদারি সংস্থা আমাকে জানিয়েছিল। আমি সে বিবাদ মিটিয়েও দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবারের ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। স্থানীয় ঠিকাদারেরা কাজ চাইতেই পারেন। তা বলে মারধর করা, হুমকি দেওয়া কোনও মতেই মানা যায় না। কংগ্রেস এদের কখনও সমর্থন করবে না। এই সবের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে এই সব পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার ফল।”

জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “ফরাক্কার স্থানীয় পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে ঠিকাদারি সংস্থা আমাকে জানায়নি কেন? এই ধরনের জুলুমবাজি কখনও মেনে নেওয়া হবে না। খবর নিচ্ছি কারা করছে, কেই বা মদত দিচ্ছে তাদের। দরকার হলে পুলিশের পাহারা বসিয়ে কাজ হবে ওই সেতুর।” এনটিপিসি ফরাক্কা-র অ্যাডিশেনাল জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) মিলন কুমার জানিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের সমস্ত স্তরে এর আগে বহু বার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। তাঁর কথায়, “সমস্ত রাজনৈতিক দলেরই কমবেশি মদত থাকে। কোথাও বলে কোনও লাভ নেই। স্থানীয় লোকজনের গুন্ডাগিরিতে আমাদের কর্মীরা ভীতস্বন্ত্রস্ত। তাই কাজটাই বন্ধ করে দিতে হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন