গয়নার ব্যাগ ফিরিয়ে ‘সুপার হিরো’ আঁধারমানিকের ছাত্র

সদ্য কিশোর ছেলেটির মনে অনেক স্বপ্ন। আর ভাগ্যের খেলায় শিশু দিবসের দিনেই সে যেন প্রায় ‘সুপার হিরো’। প্রাণের থেকেও বেশি প্রিয় সাইকেলটাকে বাহন করেই বাজি জিতে ফিরল হোসেননগর সিনিয়র মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র মুসাইতির শেখ। এক মহিলার কয়েক ভরি সোনার গয়না ফিরিয়ে দিয়ে শুধুই যে সততার পরিচয় দিল তাই নয়। তার জন্য বাঁচল নিরপরাধ অটো চালকও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫১
Share:

বহরমপুর থানায় রেবতীদেবীর সঙ্গে মুসাইতির। নিজস্ব চিত্র।

সদ্য কিশোর ছেলেটির মনে অনেক স্বপ্ন। আর ভাগ্যের খেলায় শিশু দিবসের দিনেই সে যেন প্রায় ‘সুপার হিরো’। প্রাণের থেকেও বেশি প্রিয় সাইকেলটাকে বাহন করেই বাজি জিতে ফিরল হোসেননগর সিনিয়র মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র মুসাইতির শেখ। এক মহিলার কয়েক ভরি সোনার গয়না ফিরিয়ে দিয়ে শুধুই যে সততার পরিচয় দিল তাই নয়। তার জন্য বাঁচল নিরপরাধ অটো চালকও।

Advertisement

শুক্রবার সকালে বহরমপুরে এসে নামেন ইসলামপুর থানার মহিষারপুর গ্রামের বাসিন্দা রেবতী মণ্ডল। লালবাগ আস্তাবল মোড়ে বাস থেকে নেমে বহরমপুরে আসার জন্য অটোতে ওঠেন। বহরমপুরে ভাগীরথীর পাড় বরাবর তৃতীয় সড়ক ধরে এসে মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠের কাছে নেমে যান। সঙ্গের ব্যাগটি সিটের পিছনে রেখেই নেমে পড়েন তিনি। যতক্ষণে সে কথা মনে পড়েছে, ততক্ষণে অটো চলে গিয়েছে অনেক দূর। রেবতীদেবী জানান, “ব্যাগে ছিলে বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না। জমি কেনার টাকা জোগাড় করতে গয়না বিক্রি করা দরকার। সে কারণেই বহরমপুর এসেছিলাম। ব্যাগটা নিয়ে অটো চলে যেতেই মাথাটা ঘুরে গেল।”

ইতিমধ্যে তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোক জড়ো হয়ে গিয়েছে। পাশ দিয়ে যাচ্ছিল মুসাইতির। রেবতীদেবীর কথা শুনেই সাইকেল ছুটিয়ে সোজা ধাওয়া অটোর পিছনে। বেশি দূর যেতে হয়নি। জগন্নাথ ঘাটের কাছে এসেই অটোর নাগাল পেয়ে যায় সে। মুসাইতির বলে, “জগন্নাথ ঘাটের কাছে এসে অটো চালককে সব কথা খুলে বলি। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাগটি আমাকে ফিরিয়ে দেন। তারপর বেশ কিছুক্ষণ ওখানেই অপেক্ষা করি ওই ভদ্রমহিলার জন্য। কিন্তু তিনি তো এলেন না। তাই বাধ্য হয়েই পুরনো কান্দি বাসস্ট্যান্ডের কাছে ট্রাফিকে কর্তব্যরত এক সিভিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলি। তিনিই আমাকে বহরমপুর থানায় নিয়ে যান।”

Advertisement

এ দিকে ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে পারেননি রেবতীদেবী। ব্যাগ খোয়া যাওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানাতে তিনিও বহরমপুর থানায় গিয়ে পৌঁছন। তাঁর কান্নাকাটিতে জমায়েত হওয়া এলাকার বাসিন্দারা খুঁজে বের করে ওই অটো চালককে। গয়না চুরির অভিযোগে চালককে দু’এক ঘা ততক্ষণে দেওয়াও হয়ে গিয়েছে। চিত্রনাট্যের অন্যপ্রান্ত তখন মধুর সমাপ্তির দিকে। থানাতেই রেবতীদেবী খুঁজে পান তাঁর হারানো গয়নার ব্যাগ। দু’হাত ভরে আশির্বাদ করেন মুসাইতিরকে।

বহরমপুর থানার টাউন সাব-ইন্সপেক্টর সন্দীপ পাল বলেন, “ততক্ষণে গণপিটুনি প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছে। খবর পেয়ে ঠিক সময়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই অটো চালককে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।”

ব্যাগ ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশি আঁধারমাণিক পোল্লাডাঙার বাসিন্দা মুসাইতির। তার বাবা নিস্তার শেখ শাহাজাদপুর রাজানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে ছোট ছেলেটার শান্ত স্বভাবের সুখ্যাতি কোনও কালেই নেই। তবে আজকের দুরন্তপনায় সকলেই খুশি হবে বলে আশা তার। মুসাইতির বলে, “শিশু দিবসের জন্য আজ স্কুল ছুটি ছিল। তাই সাইকেল চড়ে বাড়ি ফিরছিলাম। তখনই ওই ঘটনা।”

কিন্তু অত জোরে সাইকেল চালানোয় প্রাণের ঝুঁকিও তো ছিল? এই প্রশ্নে লাজুক হেসে মুসাইতির বলে, “বন্ধুদের সঙ্গে তো অমন প্রতিযোগিতা কতই করি। আজ তো সেই জোরেই ব্যাগটা ফিরিয়ে দিতে পারলাম। ভেবেই ভাল লাগছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement