প্রতীকী ছবি।
জেলা প্রশাসনের কড়া নির্দেশ পেয়েও সুতিতে বেআইনি পাথর খাদান মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও এফআইআরই রুজু করল না সুতি ২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে সুতি এলাকার সাজুর মোড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বেআইনি ওই খাদানগুলি। এ দিন ওই দফতরের আধিকারিক ছিলেন না। সব জেনেও মুখ খুলতে চাননি অফিসের অন্য কর্মীরাও। এমনকী অফিসের রাজস্ব আধিকারিক মহম্মদ ইসলাম খাদান নিয়ে জেলা প্রশাসনের কড়া নির্দেশের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন।
অথচ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ঢিল ছোড়া দূরত্বে সাজুর মোড়ে দেখা গেল বৃহস্পতিবারও খাদান চলছে বহাল তবিয়তেই। যা শুনে মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, “এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। ওই পাথর খাদানগুলি সম্পূর্ণ বেআইনি। সুতি ২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিককে সমস্ত খাদান মালিকের বিরুদ্ধে সুতি থানার পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। আমি যতদূর জানি সেই এফআইআর রুজু করাও হয়েছে।”
কিন্তু সুতি থানার ওসি সম্রাট ফনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় খাদান মালিকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই জমা পড়েনি। পরে সুতি ২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক গোলক সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কবুল করেন অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি) নির্দেশের কথা। তাঁর সাফাই, “১২ জন খাদান মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র লেখা হয়ে গিয়েছে। এ দিন ব্লক অফিসে একটি সভায় বাস্ত থাকার কারণে সেই অভিযোগপত্র থানায় পাঠানো যায়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব তা সুতি থানায় পাঠিয়ে দেব।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার পরেও যারা এফআইআর করতেও এত গড়িমসি করে তাদের প্রশ্রয়েই তো এই বেআইনি খাদানগুলির এত বাড়বাড়ন্ত। প্রশাসনের কর্তারাও খুব ভাল করে জানেন, ওই খাদানগুলির কোনও সরকারি অনুমতি নেই। নেই পরিবেশ দূষণ পর্ষদের ছাড়পত্রও। তারপরেও কোন অজ্ঞাত কারণে এই খাদানগুলি চলছে কে জানে!
সুতির স্থানীয় বাসিন্দারা ওই খাদানের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ। গোটা এলাকা জুড়ে পাথরের গুঁড়ো কুয়াশার মতো আস্তরন তৈরি করে রেখেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই খাদানগুলি থেকে সামান্য দূরেই বিডিও ও ভূমি সংস্কার দফতরের ভবন। নিত্যদিন ওই দফতরের কর্তারা এই খাদানের পাশ দিয়েই যাতায়াত করেন। কিন্তু সব জেনেও তাঁরা এই বেআইনি খাদানগুলির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেন না।
সুতি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সিপিএমের ওজাম্মিল সরকারের কথায়, “ওই পাথর খাদান নিয়ে বহু বার অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। ভাবতেই পারছি না অতিরিক্ত জেলা শাসকের নির্দেশ পেয়েও কোন সাহসে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করছে।’’ অরঙ্গাবাদ ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য কংগ্রেসের শফিকুল আলম বলেন, “ওই খাদানগুলি চলার ফলে আশপাশের জমিতে কোনও ফসল হচ্ছে না। চাষআবাদ সব শিকেয় উঠেছে। চরম ক্ষতির মুখে চাষিরা।” পাথর খাদানগুলি যে বেআইনি তা মানছেন সুতির বিধায়ক তৃণমূলের বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসও। তবে তাঁর বক্তব্য, “দীর্ঘদিন ধরে চলা এই খাদান বন্ধ করে দিলে বহু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। তাই প্রশাসনের উচিত এগুলো বন্ধ করার আগে ওদের একটা ব্যবস্থা করা।” যা শুনে কার্যত চমকে উঠেছেন সুতি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি কংগ্রেসের কাওসার আলি। তাঁর কথায়, “এটা কোনও যুক্তি হল! বেআইনি ওই খাদানগুলির দূষণ কী ভয়ঙ্কর মাত্রা নিয়েছে তা বলার নয়। তাছাড়া ওই খাদানগুলিতে বহু শিশু শ্রমিকও কাজ করছে। এটা সম্পূর্ণ অমানবিক তো বটেই, বেআইনিও। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করলে স্বস্তির শ্বাস ফেলবেন এলাকার মানুষ।”
তবে প্রশাসনের পদক্ষেপের যা বহর তাতে আদৌ কোনও দিন স্বস্তি ফিরবে কি ? উত্তর জানা নেই সুতির।