ছেলের স্মৃতিতে মায়ের পুরস্কার বাস চালককে

বাস চালকের মুহূর্তের অসাবধানতায় মায়ের কোলে মাথা রেখে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিল ছেলে। চোখের সামনে বছর চব্বিশের তরতাজা ভাইকে চলে যেতে দেখেছিলেন দাদা। পনেরো বছর আগে বাস দুর্ঘটনায় করিমপুরের নির্মল সাহার মৃত্যুর সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে সাহা পরিবারকে। নির্মলবাবুর স্মৃতিতেই সাহা পরিবার গত ২০১২ সাল থেকে চালু করেছে এক অভিনব পুরস্কার—‘সুদক্ষ চালক’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০০:১৩
Share:

বাস চালকের মুহূর্তের অসাবধানতায় মায়ের কোলে মাথা রেখে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিল ছেলে। চোখের সামনে বছর চব্বিশের তরতাজা ভাইকে চলে যেতে দেখেছিলেন দাদা। পনেরো বছর আগে বাস দুর্ঘটনায় করিমপুরের নির্মল সাহার মৃত্যুর সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে সাহা পরিবারকে। নির্মলবাবুর স্মৃতিতেই সাহা পরিবার গত ২০১২ সাল থেকে চালু করেছে এক অভিনব পুরস্কার—‘সুদক্ষ চালক’।

Advertisement

সেই সব চালকেরাই এই পুরস্কারের দাবিদার যাঁরা গত এক বছর ধরে ট্রাফিক আইন মেনে চলে নজির গড়েছেন। মঙ্গলবার করিমপুর দূরপাল্লা বাস শ্রমিক ওয়েলফেয়ার সোসাইটির বার্ষিক অনুষ্ঠানে এমন ১৩ জন বাস চালকের হাতে ‘সুদক্ষ চালক’ পুরস্কার তুলে দিলেন নির্মলবাবুর বৃদ্ধা মা রেখাদেবী। পুরস্কার দেওয়ার পরে মাইক্রোফোনে কাঁপাকাঁপা গলায় আশি ছুঁইছুঁই রেখাদেবী বাস চালকদের উদ্দেশে বলছিলেন, ‘‘সাবধানে গাড়ি চালিও বাবা। তোমাদের ভুলে যেন আমার মতো আর কোনও মায়ের কোল খালি না হয়।’’ অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে নির্মলবাবুর দাদা দুর্গাবাবুর তখন চোখে জল।

করিমপুর দূরপাল্লা বাস শ্রমিক ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক সন্তু স্বর্ণকার জানান, প্রতি বছরের মতো এ বারেও ২৮ জুলাই তাঁরা বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। করিমপুর-কলকাতা ও করিমপুর-বর্ধমান রুটের প্রায় ১২টি বাসের মোট আশি জন কর্মীর উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান নবম বর্ষে পা রাখল। সেখানে রক্তদান শিবির, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা পরে দুঃস্থদের মশারি ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠান মঞ্চেই দেওয়া হয় ‘সুদক্ষ চালক’ পুরস্কার।

Advertisement

২০০০ সালের ২৪ জুলাই সকালে নিজের বাড়ির সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় জখম হন নির্মলবাবু। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান নির্মলবাবু। দুর্গাবাবু বলেন, ‘‘বহু চেষ্টা করেও ভাইকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। বছর তিনেক আগে মনে হয় এমন একটা পুরস্কার চালু করলে কেমন হয়! বিষয়টিতে মা-ও রাজি হয়ে যান।’’

এ বছর পুরস্কৃত বাস চালক সমর শেখ, শিবনাথ বৈরাগ্যদের কথায়, “হাজার প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের বাস চালাতে হয়। কখনও রাস্তা খারাপ থাকে কখনও আবহাওয়া। আবার একই সঙ্গে রয়েছে সময়সূচী মেনে নির্দিষ্ট সময়ে দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর তাড়া। সে সব সামলে এই পুরস্কার পাওয়াটা আমাদের কাছে সম্মানের বিষয়। স্বীকৃতিও বটে।’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তেহট্টের মহকুমাশাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এমন পুরস্কার দেওয়ার উদ্যোগ অভিনব ও প্রশংসনীয়। বাস চালকেরা অনুপ্রাণিত হবেন। কমবে দুর্ঘটনার সংখ্যাও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন