বাস নেই। যাতায়াত এ ভাবেই। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
‘মোহনা’ নামে বহরমপুরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাসে উপযুক্ত পরিষেবা পাওয়ার দাবিতে ধর্মঘট করলেন মুর্শিদাবাদ জেলার যাত্রীবাহী বেসরকারি বাস শ্রমিকারা। শুক্রবারের ওই ধর্মঘটের ফলে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। ওই বাস টার্মিনাসটি বহরমপুর পুরসভার। এ দিন ধর্মঘট করেই ক্ষান্ত হননি শ্রমিকরা। দ্রুত তাঁদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ১০ মার্চের পর থেকে পুরসভাকে কর দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন তাঁরা।
একই ভাবে বয়কটের পাশাপাশি লাগাতার কর্মবিরতিতেও যাওয়া হবে বলে তাঁরা জানান। বহরমপুরের পুর-প্রধান নীলরতন আঢ্য দেশের বাইরে আছেন। উপ-পুরপ্রধান মৈনুদ্দিন চৌধুরি বাবলা জানান, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পুর-প্রধান ফিরবেন। তিনি ফিরে আসার পর বাস শ্রমিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় বসা হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “তার পরও এ দিন বাস না চালিয়ে তাঁরা সঠিক কাজ করেননি।”
বহরমপুর শহরের বুক চিরে চলে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। বহরমপুর শহরের বুকে জাতীয় সড়ক লাগোয়া ‘মোহনা’ নামে অত্যাধুনিক বাস টার্মিনাসের উদ্বোধন করা হয় ২০০৮ সালের ২ অক্টোবর। ওই টার্মিনাসের উপর নির্ভর করে দৈনিক জেলার ভিতরে ও জেলার বাইরে যাতায়াত করে প্রায় ৫২৫টি বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস। ওই বাসগুলির মোট কর্মী সংখ্যা প্রায় ২০০০। এ জেলায় বাস শ্রমিকদের মোট ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় কমিটি’। কমিটির অন্যতম সম্পাদক জয়দেব মণ্ডল জানান, যাত্রী থেকে শুরু করে বাস শ্রমিক পর্যন্ত কারও জন্যই পর্যাপ্ত পানীয় জল, শৌচালয়, বিশ্রামাগার নেই। বাস দাঁড়ানোর পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। দৈনিক বাস পিছু ২০ টাকা এবং মাল বহনের রিকশা প্রতি দৈনিক ৫ টাকা আদায় করে পুরসভা। অথচ বাস টার্মিনাস নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় না। টুকটুক ও রিকশা দাঁড় করানোর জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকায় বাস টার্মিনাসের সামনে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। টিকিট কাউন্টার থাকলেও তা যথাযথ নয়। তিনি বলেন, “ওই সব সমস্যা সমাধানের জন্য গত ৮ বছর ধরে পুরসভার কাছে আবেদন নিবেদন করে কোনও সুরাহা হয়নি। তার ফলে বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে নেমেছেন।”
উপ-পুরপ্রধান মৈনুদ্দিন চৌধুরি বাবলার দাবি, শৌচালয় ও পানীয় জলের জন্য নির্মাণ কাজ চলছে। “আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পুর-প্রধান বহরমপুরে ফিরে ‘মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় কমিটি’র সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে তিনি গত ১৪ ফেব্রয়ারি বাস শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। তারপরও আচমকা বাস ধর্মঘট করে লক্ষাধিক যাত্রীকে বিপাকে ফেলে শ্রমিকরা সঠিক কাজ করেননি।” সমন্বয় কমিটির পক্ষে জয়দেববাবু বলেন, “পুরপ্রধান আমাদেরকে একই রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। তার পর এক বছর কেটে গিয়েছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি। ফের তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে বাস পিছু দৈনিক ২০ টাকা করে পুরসভাকে দেয়। ট্যাক্স বয়কটের সিদ্ধান্ত ১০ মার্চ স্থগিত রাখা হয়েছে। বাস ধর্মঘট, বা শ্রমিকদের কর্মবিরতি আচমকা করা হয়নি। প্রশাসন ও পুরসভাকে আগাম জানিয়েই আন্দোলনে নামা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এর পরও দাবি পূরণ না হলে প্রথমে লাগাতার কর্মবিরতির কর্মসূচি নেওয়া হবে। তারপর মোহনা বাস টার্মিনাস বয়কটও করা হবে।”