জাল নোট-সহ জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতের নাম রাকেশ আলি। তাঁর কাছ থেকে একহাজার ও পাঁচশো টাকার মোট ২৯ টি জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা ওই নেতার বাড়ি নদিয়ার রানাঘাট দাসপাড়া এলাকায়। সোমবার বিকালে রানাঘাট থানার হবিবপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার অর্নব ঘোষ বলেন, “বিভিন্ন রকমের অপরাধ মূলক কাজের সঙ্গে ওই যুবক যুক্ত। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এ দিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় সিপিএম-র ছাত্র ছায়ায় ছিল রানাঘাট পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাকেশ আলি। সে সময় রানাঘাট কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে তাঁকে দলবল নিয়ে হাজির থাকতেও দেখা যেত। ক্ষমতাসীন বামপন্থীদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ভয়ে বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা মুখ খুলতে পারতেন না। পরে অবশ্য তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। একবার জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তৃণমূল সাংসদ ও নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে তাকে দেখা যায়, কখনও বা মঞ্চের নীচে। শহরের নানা এলাকা থেকে টাকা তোলা-সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকী খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে একবার জেলও খেটেছেন। রানাঘাট শহরে গত ৩১ অগস্ট রাতে দুই ব্যবসায়ীর বাড়িতে বোমাবাজি করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর থেকেই এলাকাছাড়া ছিলেন রাকেশ। রানাঘাট শহরে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের চূড়ান্ত প্রমাণ মিলেছে গত বৃহস্পতিবার। তোলবাজদের হুমকিতে ওই দিন শহরের রথতলা বাজার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।
জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী ও চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষ বলেন, “এক সময় কোথায় কী ছিল তা আমি বলতে পারব না। তবে, বছর খানেক আগে জেলার দায়িত্ব নিয়েছি। সেই সময় থেকে রাকেশ সংগঠনের কোনও পদে নেই।”
রানাঘাটের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অলক কুমার দাস বলেন, “রাকেশ আলি কিছুদিন আমাদের দলের মিটিং-মিছিলে যেত। পরে আমরা তাকে আসতে বারণ করে দিই। কিছুদিন পর জানতে পারি রাকেশ তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। বড় নেতাও হয়ে গিয়েছে।”
প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য ও রানাঘাট পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার দুলাল পাত্র বলেন, “শঙ্কর সিংহ রানাঘাটের বিধায়ক থাকার সময়ে এলাকার মানুষ খুব শান্তিতে ছিলেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সমাজ বিরোধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রানাঘাটের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।” এ দিকে তৃণমূলের তরফে জেলা সভাপতি গৌরী দত্ত বলেন, “আমরা একটা কথাই বলব আইন আইনের পথে চলবে।” একই কথা শুনিয়ে রানাঘাটের তৃণমূল বিধায়ক ও রানাঘাটের পুরপ্রধান পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুষ্কৃতীদের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।”