পৈত্রিক জমির বাঁটোয়ারা নিয়ে বিবাদের জেরে ভাই ও তাঁর স্ত্রীকে হাসুঁয়া দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। শনিবার সন্ধে ৭টা নাগাদ সাগরদিঘি থানার মথুরাপুর চাঁইপাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। মৃতের নাম দুর্গেশ মণ্ডল (৪৬) ও অলকা মণ্ডল (৪১)। মা-বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে হাসুঁয়ার কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে লক্ষ্মী মণ্ডল। তাঁকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর সপরিবারে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বড় ভাই অবনী, ছোট ভাই মন্টু ও অবনীর ছেলে রঞ্জিত। রাতে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার-সহ পদস্থ পুলিশ কর্তারা।
পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “পৌনে তিন বিঘে জমির বাঁটোয়ারা নিয়ে প্রায় ১২ বছর ধরে তিন ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ চলছিল। তারই পরিণতিতে এই ঘটনা। তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।”
মথুরাপুর গ্রামের চাঁইপাড়ায় মণ্ডল পাড়ায় প্রায় সকলে ক্ষুদ্র কৃষিজীবী। দুর্গেশবাবুরা তিন ভাই। গা ঘেঁষা পাশাপাশি মাটির বাড়ি। চাষের ও বাগান মিলিয়ে পৌনে ৩ বিঘে মতো জমি ছিল। তিন ভাইয়ের ভাগে কেউ একটু কম, কেউ একটু বেশি পেয়েছেন। তাই নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে ছিল। শনিবার বিকালেও একপ্রস্থ ঝগড়া হয়। পরে থেমে যায়। বাবা-মায়ের খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বড় ছেলে ভরত মণ্ডল বলেন, “বারান্দায় দিদি, আমি বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ দেখি জ্যাঠা, ছোট কাকা ও জ্যাঠার ছেলে মিলে বাবাকে টানতে টানতে ওদের উঠোনে নিয়ে যাচ্ছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই বাবার মাথায় শাবল মেরে মাটিতে ফেলে হাসুঁয়া দিয়ে কোপাতে শুরু করে ওরা। মা ছুটে যেতেই মায়ের উপর চড়াও হয় শাবল ও হাসুঁয়া নিয়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মা। ছুটে যায় দিদি। ওকেও হাসুঁয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ মারতে থাকে। আমাকে তাড়া করলে চিৎকার করে ছুটে পালাই। গ্রামের লোকজন বেরিয়ে এলেও ওদের রুদ্র মূর্তি দেখে কেউ কাছে ভিড়তে সাহস করেনি।”
অবনীবাবুর বাড়িতেই থাকেন তাঁদের ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা খুকুরানি মণ্ডল। ঘটনার সময় তিনি গিয়েছিলেন গ্রামেই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে। বাড়ি ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়ে বৃদ্ধা বলেন, “ছেলেদের মধ্যে ঝগড়া থাকলেও তিন জনের বাড়িতেই যেতাম। ঝগড়া হলে আমি সকলকে থামাতাম। কখনও ভাবিনি ছেলেরা বাপের রেখে যাওয়া সম্পত্তির জন্য এই ভাবে পরস্পরকে খুন করতে পারে।” জিয়াগঞ্জের বেলেপুকুর গ্রাম থেকে এসেছেন মৃত অলকাদেবীর ভাই অরুণ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারে অশান্তি দেখে বছর পাঁচেক আগে বেলেপুকুরেই একটা জমি কিনে রাখে দিদি। সেখানে চলে গেলে এমনটা হত না।”