কৌশিক দফাদার। —নিজস্ব চিত্র
মহাজনের সুতোর ভরসায় হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয় তাঁকে। তাঁতঘরে বসে সারা সপ্তাহে তাঁর আয় মেরেকেটে পাঁচশো। তাই ছেলের মার্কশিটে ৬৩৭ দেখে কৃষ্ণগোপাল দফাদার বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘এ যে অনেক নম্বর রে।”
নবদ্বীপ শিক্ষা মন্দির স্কুলের মেধাবী ছাত্র কৌশিক দফাদার ইতিহাসে ৮০, ইংরেজিতে ৮৪, অঙ্কে ৯২, বাংলায় ৯৩, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৪, ভূগোলে ৯৬ ও জীবনবিজ্ঞানে পেয়েছে ৯৮। নবদ্বীপের দক্ষিণে তেঘড়িপাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণগোপালবাবুর আর্থিক অনটনের কথা জানেন না এমন মানুষ এলাকায় নেই। কিন্তু তাঁরা জানতেন না কৌশিকের চোয়াল চাপা লড়াইয়ের কাহিনী।
সে কথা জানেন কেবল কৌশিকের স্কুলের শিক্ষকেরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিতকুমার কুণ্ডু রীতিমতো আপ্লুত। তিনি বলেন, “ক্লাস ফাইভ থেকে কৌশিক স্কুলে প্রথম তিন জনের মধ্যে থাকে। ও অসম্ভব মেধাবী ছাত্র। ওকে পড়িয়ে যে আনন্দ সে কেবল আমরাই জানি।”
প্রধান শিক্ষকের ঘরের বাইরে বেঞ্চে বসেছিল কৌশিক। এবার কী নিয়ে পড়বে? প্রশ্ন করতেই হাতের মার্কশিটটা দেখতে দেখতে মৃদু স্বরে বলে “বিজ্ঞান নিয়ে।” কৌশিক যে পরে গণিত নিয়ে পড়তে চায় সে কথা ভালই জানেন বাবা কৃষ্ণগোপালবাবুও। তিনি বলেন, “ওর ইচ্ছের কথা আমি জানি। কিন্তু সংসারের অভাবের কথা ভেবে ও মুখ ফুটে কিছুই বলতে চাই না। আমিও সংসার চালাতে হিমশিম খাই। ছেলের জন্য কিছুই করতে পারি না। খারাপ লাগে। কিন্তু কী করব বলুন! যেটুকু হয়েছে তা ওর স্কুলের জন্যই। নইলে কবেই ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত।’’
লেখাপড়ার বাইরে আর কিছুতেই আগ্রহ নেই তার। তবে গত বছর বিবেকানন্দের উপর ক্যুইজে জেলায় প্রথম স্থান পাওয়া কৌশিকের স্মৃতিশক্তির গল্প শোনাচ্ছিলেন প্রধানশিক্ষক রঞ্জিতবাবু— প্রায় চারশো প্রশ্নোত্তরের একটা বই পনেরো দিনে সম্পূর্ণ মুখস্থ করে ফেলেছিল সে। ফাইনাল রাউন্ডে তার উত্তর দেওয়া দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ।