দুই ষাঁড়ের অত্যাচারে নাজেহাল হোগলবেড়িয়া

গত মাসে বাড়ির পাশে মাঠে কাজ করতে গিয়েছিলেন হোগলবেড়িয়ার মহাপ্রভুপাড়ার বছর পঞ্চাশের পুলক অধিকারী। মাঠে ষাঁড় ফসল খাচ্ছে দেখে তিনি তাড়াতে যান। ভয় পাওয়া দূরের কথা আচমকা ষাঁড়টাই পুলকবাবুকে তেড়ে আসে। শিংয়ে তুলে ছুড়ে দেয় ফুট ১৫ দূরে। শুধু তাই নয় তারপরেও তাঁকে শিং দিয়ে সমানে খুঁচিয়ে চলে। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন ছুটে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রথমে বহরমপুর ও পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার নীলরতন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:২৩
Share:

গত মাসে বাড়ির পাশে মাঠে কাজ করতে গিয়েছিলেন হোগলবেড়িয়ার মহাপ্রভুপাড়ার বছর পঞ্চাশের পুলক অধিকারী। মাঠে ষাঁড় ফসল খাচ্ছে দেখে তিনি তাড়াতে যান। ভয় পাওয়া দূরের কথা আচমকা ষাঁড়টাই পুলকবাবুকে তেড়ে আসে। শিংয়ে তুলে ছুড়ে দেয় ফুট ১৫ দূরে। শুধু তাই নয় তারপরেও তাঁকে শিং দিয়ে সমানে খুঁচিয়ে চলে। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন ছুটে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রথমে বহরমপুর ও পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার নীলরতন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবশেষে টানা ১৭ দিন লড়াইয়ের পর ১৫ অগস্ট রাতে তিনি মারা যান।

Advertisement

দিন কয়েক আগে কদিন আগে মুর্শিদাবাদ থেকে লাল রঙের মারুতিতে চেপে পোড়াঘাটে বাপের বাড়িতে আসেন পলি সাহা। বারান্দায় গাড়িটি দাঁড় করানো ছিল। আচমকা একটি ষাঁড় এসে প্রবল আক্রোশে শিং দিয়ে গাড়িটিকে গুঁতোতে থাকে। চোখের সামনে গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যেতে দেখেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু ভয়ে এগোতে পারেননি কেউই।

দুই ষাঁড়ের অত্যাচারে এমনভাবেই প্রায় বছরখানেক ধরে ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন হোগলবেড়িয়া এলাকার আট থেকে আশি। দিনের বেলায় কেউ কেউ সাবধানে বেরোচ্ছেন বটে, কিন্তু সন্ধ্যা হওয়া মাত্রই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাড়ির সদর দরজা। শুধু তাই নয় আসা-যাওয়া বন্ধ হতে বসেছে আত্মীয়-স্বজনদেরও। ওই এলাকার বাসিন্দা রেনুকা সিংহরায় বলেন, “ষাঁড়ের ভয়ে সকলেই চিন্তায় রয়েছি। ছেলেমেয়েদের স্কুলে বা বাড়ির বাইরে খেলতে যেতে দিতে ভয় করছে। কখন এসে যে আবার কাউকে মারবে না তা কে বলতে পারে?”

Advertisement

এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, দুই ষাঁড়ের রং যেমন দুই রকম তেমনি ওদের লক্ষ্যও দুই রকম। ধূসর রঙের হৃষ্টপুষ্ট ষাঁড়টির চেহারা তত উগ্র নয়। কিন্তু মানুষকে গুঁতোনো তার লক্ষ্য। অন্য দিকে, কপালে সাদা তিলক আঁকা কালো রঙের ষাঁড়ের চেহারা খুব উগ্র। কোনও মানুষকে না গুঁতোলেও ছোট গাড়ির তার উপর খুব রাগ। মারুতি জাতীয় যেকোনও ছোটগাড়ি দেখলেই রাস্তা আটকে দিচ্ছে। কখন গুঁতিয়ে ভেঙে দিচ্ছে গাড়ি। বিশেষ করে লাল রঙের গাড়ির যাতায়াত প্রায় বন্ধ। বিপদে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামে যাত্রীবাহী ছোট গাড়িগুলিও।এলাকার লোকজন তাকে ‘ভয়ঙ্কর’ নামেই চেনে। তার নজর ছোট গাড়ির দিকে। এলাকাও ভাগ করে নিয়েছে দুই ষাঁড়।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয় মাসে এলাকার অনেকেই ষাঁড়ের গুঁতোয় জখম হয়েছেন। দিন কয়েক আগে ষাঁড়ের গুঁতোয় পা ভেঙেছিল বাজারপাড়ার বাসুদেব বন্দোপাধ্যায়ের। নেহাত টাকার জোরে পা সারিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। কিন্তু সবার যে সেই আর্থিক সঙ্গতি আছে তেমন তো নয়। তেমন কারও কিছু হলে যাবেন কোথায়। স্থানীয় বাসিন্দা সনজিৎ দাস বৈরাগ্য বলেন, “এত চোরডাকাত নয় যে, পুলিশের কাছে গিয়ে কেস করব বা আদালতে যাব?” করিমপুর ১ ব্লকের বিডিও তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। বন দফতরের সাথে কথা বলে সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন