দুষ্কৃতীদের বদলা নেওয়ার লড়াইয়ে বলি কিশোর

পাড়ার চায়ের দোকানে ১৮-ইঞ্চি রঙিন টিভির পর্দায় চোখ আটকে দুই ভাইয়ের। সেখানে অশরীরী এক আত্মা খুন করছে এক ব্যক্তিকে। ছোট ভাই বছর বারোর মানিক একবার দাদাকে তাড়াও দিয়েছিল, ‘রাত হয়ে যাচ্ছে, বাড়ি চল।’ দাদা বলেছিল, ‘খুনের সিনটা শেষ হলেই যাচ্ছি।’ তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল দাদা শুভারুল শেখ (১৬)।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৭
Share:

নিহত কিশোরের শোকার্ত পরিজন। ছবি: বিশ্বজিত্‌ রাউত

পাড়ার চায়ের দোকানে ১৮-ইঞ্চি রঙিন টিভির পর্দায় চোখ আটকে দুই ভাইয়ের। সেখানে অশরীরী এক আত্মা খুন করছে এক ব্যক্তিকে। ছোট ভাই বছর বারোর মানিক একবার দাদাকে তাড়াও দিয়েছিল, ‘রাত হয়ে যাচ্ছে, বাড়ি চল।’ দাদা বলেছিল, ‘খুনের সিনটা শেষ হলেই যাচ্ছি।’ তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল দাদা শুভারুল শেখ (১৬)।

Advertisement

বুধবার রাত আটটা নাগাদ বোমার আওয়াজে কেঁপে ওঠে মুর্শিদাবাদের ডোমকল মেহেদিপাড়া। দুষ্কৃতীদের দুই দলের বোমাবাজি শুরু হয়। ভয় পেয়ে ভাইয়ের হাত ধরে শুভারুল বাড়ির দিকে দৌড়োয়। দোকান থেকে বাড়ি ১৫০ মিটার দূরে। মানিক জানায়, মাঝপথে হাত ছেড়ে গিয়ে পিছিয়ে পড়ে সে। তাকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে শুভারুল। ঠিক তখনই বোমা এসে লাগে শুভারুলের গায়ে। “দাদা মাটিতে পড়ে যায়। রক্তে ওর শরীর ভেসে যাচ্ছিল,” বলে মানিক।

প্রথমে ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল, পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় শুভারুলকে। বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানেই সে মারা যায়। পুলিশ একজনকে আটক করেছে, পাঁচজনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছে। সমাজবিরোধীদের প্রকাশ্য বোমাবাজির জেরে ওই মৃত্যু ফের ডোমকলে পুলিশি ভূমিকার প্রশ্ন তুলে দিল।

Advertisement

যে দুই গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ, তারাও মেহেদিপাড়ারই বাসিন্দা। একটি দলের মাথা একাধিক খুন ও ডাকাতিতে অভিযুক্ত মইদুল গায়েন, ওরফে ময়া। তার বৃদ্ধ বাবা এ দিন বলছেন, “এ ভাবে একটি নিরীহ ছেলের মৃত্যু মানা যায় না। এ সব বন্ধ হোক।” ময়া অবশ্য দাবি করেছে, অপর দলের প্রধান সেলিম মণ্ডল তাকেই লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ছিল। তার গায়ে একটি বোমা লাগলেও তা ফাটেনি। তারপরেও ময়ার দিকে ছোঁড়া আরও একটি বোমা শুভারুলের গায়ে লেগে ফেটে যায়।

অভিযুক্ত সেলিম মণ্ডল নিজেও বোমার আঘাতে জখম। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সেলিমের পাল্টা দাবি, “আমাকে লক্ষ্য করে ময়ার দলই বোমা ছোড়ে। আমি জখম হই। শুভারুল মারা যায়। এখন ময়ার ভয়েই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে শুভারুলের পরিবার।”

পুলিশ জানিয়েছে, এই এলাকায় ময়া এবং সেলিমের আলাদা গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কয়েকটি খুন-পাল্টা খুনের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক মাস ময়া এলাকায় ছিল না। তাই গোলমালও হয়নি। সম্প্রতি সে বাড়ি ফেরায় ফের হামলা শুরু করেছে অপর গোষ্ঠী। ডোমকলের এসডিপিও অমরনাথ কে বলেন, “দু’দল সমাজবিরোধীর গণ্ডগোলেরই বলি হয়েছে ওই কিশোর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন