নদী-নালা-খাল-বিলে ভর্তি এলাকায় নৌকার বড় কদর ছিল আগে। এখন খাল বিল গুলো সব মজে যাওয়ায় নৌকা চলে না বিশেষ। নদিয়ার চাকদহ থানার শিমুরালী চান্দুরিয়া গঙ্গার ঘাটে নৌকার সংখ্যাটা কমে গিয়েছে চোখে পড়ার মতো। স্বাভাবিক ভাবেই নৌকা বানানো বা মেরামতির কাজে যুক্ত কারিগরদের হাতে কাজ নেই আর। অগত্যা কাঠের আবসাবপত্র তৈরির কাজে চলে যাচ্ছেন কেউ তো কেউ একেবারেই অন্য পেশায়।
নৌকা কমছে কেন?
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হলে জানা গেল, এক তো খালগুলো মজে যাওয়ায় নৌকায় যাতায়াত বা মাছ ধরার মতো কাজ করা যায় না আর। তার উপরে ভাল নৌকা বানাতে গেলে এত খরচ পড়ে যাচ্ছে যে স্থানীয় লোকজনের পক্ষে তা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। হুগলি জেলার বলাগড় থানার শ্রীপুর বাগানপাড়ার বাসিন্দা রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, “এ পর্যন্ত তিনটে নৌকা মেরামতির কাজ পেয়েছি। নতুন নৌকা বানানোর বরাত পাওয়া
ভাগ্যের ব্যাপার।”
নৌশিল্পীরা জানালেন, এখন যা বাজার তাতে এক ইঞ্চি চওড়া শাল কাঠ দিয়ে ১৮ হাত নৌকা বানাতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। সেগুন কাঠ দিয়ে ওই নৌকা বানাতে খরচ পড়বে কমপক্ষে ৭৫ হাজার টাকা। বাবলা কাঠ দিয়ে করলে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে যাবে হয়তো, তবে গুণগত মান খুব একটা ভাল হবে না। আবার বালি বহন করার জন্য দেড় ইঞ্চি কাঠ দিয়ে বড় মাপের নৌকা বানাতে আরও অনেক বেশি টাকা খরচ হবে। নৌ-শিল্পী অরুণ মণ্ডল বলেন, “জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও অনেকের পক্ষে বাড়িতে নৌকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।”
তার উপরে খালগুলো মজে যাওয়ায় নৌকায় মাছ ধরার চলটাও কমে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সহদেব সরকার বলেন, “আমার দু’টো নৌকা রয়েছে। এখানে সেভাবে মাছ পাওয়া যায় না। সেজন্য একটা নৌকা ভাড়া দিয়েছি। বর্ষার মরসুমে ৬-৭ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে। বাড়িতে ফেলে রেখে তো লাভ নেই।” আর এক বাসিন্দা কিশোরী হালদার বলেন, “জল নেই বলে মাছও নেই। মাছ না ধরতে পারলে তো আর নৌকা বাড়িতে রেখে লাভ নেই। মাছ ধরতে হলে সেই ভাগীরথীতে যেতে হবে। অত হ্যাপা আর এখন কে নেয়।”
চান্দুরিয়া ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের তীব্রজ্যোতি দাস মেনে নেন, এক সময় ভাগীরথী নদী থেকে একটা খাল কাটা ছিল। সেই খাল দিয়ে ওই সব এলাকায় জল আসত। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে সেই জলে ভালই মাছ পাওয়া যেত। ঘাটের ধারে গেলে সারি দিয়ে নৌকা দেখতে পাওয়া যেত। খালটা দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় মজে গিয়েছে। উপপ্রধান বলেন, “একশো দিনের কাজে খাল সংস্কার করা হয়েছে। আশা করছি ফের মাছ আসবে খাল-বিলে।”