টানা সাত দিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে নবদ্বীপের ইন্টারনেট এবং টেলিফোন পরিষেবা। যার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে হাসপাতাল, থানা, দমকলের মতো জরুরি দফতরের স্বাভাবিক কাজকর্ম। শহরের ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, স্কুল কিংবা সরকারি দফতরগুলোতেও ভোগান্তির ছবিটা একই। দিনের পর দিন শহরের বেশির ভাগ সাইবার কাফে বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়ছেন কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার্থীরা। বেড়াতে যাওয়ার টিকিট বুকিং, ফর্ম জমা দেওয়া কিংবা পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহের মতো প্রয়োজনীয় ব্যাপারে নবদ্বীপের মানুষকে ছুটতে হচ্ছে কৃষ্ণনগরে। সব মিলিয়ে সাত দিন ধরে এই অবস্থায় নবদ্বীপ কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা থেকে কবে নাগাদ মুক্তি পাওয়া যাবে সমস্যা মিটবে তার স্পষ্ট কোনও জবাব মেলেনি বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের কাছেও। নবদ্বীপের সাব ডিভিশন্যাল ইঞ্জিনিয়ার সীতানাথ দে বলেন, “এক বেসরকারি সংস্থার ফোর জি লাইনের কাজ চলছে। সেই কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অপটিক্যাল ফাইবার কেটে যাচ্ছে এবং ব্রডব্যান্ড থেকে বেসিক ফোনের পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
কৃষ্ণনগর থেকে মাটির তলা দিয়ে কমবেশি বাইশ কিলোমিটার জুড়ে নবদ্বীপের বেসিক ফোন ও ব্রডব্যান্ডের অপটিক্যাল ফাইবারের লাইন এসেছে। এখন বেসরকারি সংস্থার ফোর জি পরিষেবার জন্য প্রায় একই পথ দিয়ে লাইনের কাজ চলছে। অত্যাধুনিক ‘মাইক্রো টানেলিং’ পদ্ধতিতে যন্ত্রের সাহায্যে মাটির নীচে লাইনের কাজ চলছে কোনওরকম খোঁড়াখুঁড়ি না করেই। আর এ ভাবে কাজ করতে গিয়েই যথেচ্ছ ভাবে কেটে যাচ্ছে বিএসএনএলের ভূগর্ভস্থ লাইন। টেলিফোনের অভিজ্ঞ কর্মীরা জানান, মাটির তলা দিয়ে যে লাইন আছে তার কোনও ম্যাপ বা ডায়াগ্রাম না থাকায় বোঝা সম্ভব নয় যে, কোন জায়গা দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার ফেলা আছে। ফলে একই অঞ্চল দিয়ে অন্য সংস্থা যখন মাটি না খুঁড়ে কেবল ঢোকাচ্ছে তখন কোথায় লাইন কেটে যাবে তার কোনও ঠিক নেই।
ইন্টারনেটের অভাবে চরম সঙ্কটে নবদ্বীপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার আশিসরঞ্জন কুঁয়ার বলেন, “জেলা এবং রাজ্যের সঙ্গে আমরা গত সাত দিন ধরে যোগাযোগ করতে পারছি না। নবদ্বীপ হাসপাতাল এখন রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা ভুক্ত। প্রতিদিন রোগীদের বিষয়ে নানা তথ্য পাঠাতে হয়। কিন্তু এই অবস্থার জন্য আমরা সেসব কিছুই করতে পারছি না।” একই কারণে সমস্যায় পড়েছে নবদ্বীপ থানাও। ব্রডব্যান্ডের অচলাবস্থায় বিরক্ত হয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক ম্যানেজার দুর্গাদাস মুখোপাধ্যায় বলছেন, “নবদ্বীপে আমাদের মোট চারটি শাখার মধ্যে তিনটি শাখা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ফোর জি, ফাইভ জি কত কিছু আসবে। তাই বলে এ ভাবে বিএসএনএল অচল হয়ে যাবে। এটা কোনও কাজের কথা হতে পারে না।”
বিপাকে পড়েছেন শহরের অসংখ্য সাইবার কাফের মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রায়ই এমন ভাবে বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড বসে যায়। স্থানীয় কাফে মালিক বাসুদেব চৌধুরি বলেন, “এই সময় পুজোর বুকিং চলছে। লোকজন এসে ফিরে যাচ্ছেন। ব্যবসার এই ভরা মরসুমে আমরা খুব বিপদে পড়ে গিয়েছি।” নবদ্বীপের মানুষের ক্ষোভ সামলাতে যখন নাজেহাল বিএসএনএলের স্থানীয় দফতর। তখন আশ্চর্য রকম ভাবে উদাসীন জেলার কর্তারা। কৃষ্ণনগরের নক্ষত্রভবনে এই সমস্যা নিয়ে কথা বলার কাউকে পাওয়া যায়নি। বিএসএনএলের নদিয়ার জেনারেল ম্যানেজারের ও ডিভিশন্যাল ইঞ্জিনিয়ার দু’জনেরই কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি।