প্রতিশ্রুতি সার, সাত বছরেও হল না শিল্পতালুক

একই প্রকল্পে দু’ বার শিলান্যাস করেছেন দু’জন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও গতি পেল না রেজিনগরের শিল্পতালুক প্রকল্পের কাজ। মুর্শিদাবাদে তেমন কোনও শিল্প নেই। এমন ‘অপবাদ’ ঘোচাতে ২০০৭ সালের ১৬ জুন রেজিনগরে শিল্পতালুকের শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর সেই একই শিল্পতালুকের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু শিল্পতালুকের ওই প্রকল্প কোনও গতি পায় না।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

রেজিনগর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০০:৪৩
Share:

এই ভাবেই জন্মেছে আগাছা।—নিজস্ব চিত্র।

একই প্রকল্পে দু’ বার শিলান্যাস করেছেন দু’জন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও গতি পেল না রেজিনগরের শিল্পতালুক প্রকল্পের কাজ।

Advertisement

মুর্শিদাবাদে তেমন কোনও শিল্প নেই। এমন ‘অপবাদ’ ঘোচাতে ২০০৭ সালের ১৬ জুন রেজিনগরে শিল্পতালুকের শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর সেই একই শিল্পতালুকের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু শিল্পতালুকের ওই প্রকল্প কোনও গতি পায় না।

রেজিনগর মোড় থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পলাশির দিকে কিছু দূর এগোলে ডান হাতে এই শিল্পতালুক। বাম আমলে ১৮৭ একর জমিতে সীমানা প্রাচীর, একটি অসমাপ্ত দোতলা ভবন ও একটি জলাধার ছাড়া আর কিছুই হয়নি। নতুন সরকার আসার পরেও কেটে গিয়েছে প্রায় তিন বছর। কিন্তু অবস্থার বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি।

Advertisement

তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীর অবশ্য দাবি করেন, “সিপিএম চার বছরে শুধু প্রাচীর দিয়েছিল। আমরা তিন বছরের কম সময়ে ৬৪ কোটি টাকা ব্যয় করে বিদ্যুৎ এনেছি। এছাড়া নিকাশি ব্যবস্থা সহ-অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। জুট কর্পোরেশনের একটি গোডাউন নির্মাণ হচ্ছে। আশা করছি ওই গোডাউনের পাশাপাশি আরও কিছু প্রকল্পের কাজ এক বছরের মধ্যেই শেষ হবে। সেটা হয়ে গেলে জেলার দুই হাজার বেকার কাজ পাবে।”

হুমায়ুনের দাবি উড়িয়ে সিপিএমের রেজিনগর লোকাল কমিটির সম্পাদক মহম্মদ বদরউদ্দিন বলেন, ‘‘নতুন সরকার কাজের কাজ কিছু না করে বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তাকর্মীদের পিছনে অহেতুক সরকারি অর্থ নষ্ট করছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে শিলান্যাসের সময়ে বলা হয়েছিল, দু’ বছরের মধ্যেই ওই শিল্পতালুকে জুট পার্ক, রেশম পার্ক সহ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে উঠবে। রেজিনগর, বেলডাঙা, নওদা অঞ্চলে প্রচুর পাট চাষ হয়। এলাকার মানুষও ভেবেছিলেন যে, শিল্পতালুক হওয়ার পর পাট নিয়ে তাঁদের আর আতান্তরে পড়তে হবে না। কিন্তু তাঁদের সে ভাবনা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ভোট এলেই এই শিল্পতালুককে শিয়ালছানার মতো ব্যবহার করেন রাজনীতির কারবারিরা। ভোট ফুরোলেই তাঁরা সে কথা আর মুখে আনেন না তাঁরা। এলাকাবাসীর কথায়, শিল্পতালুকের দখল রাখতে রাজনৈতিক দলগুলি যতটা সচেষ্ট, কাজের কাজে ততটা নন। বাম আমলে ওই তালুকের দায়িত্বে ছিলেন সিপিএমের লোকজন। পরে আসে কংগ্রেস। এখন দেখভাল করে তৃণমূল। বারবার ক্ষমতার হাতবদল হলেও কাজে গতি আসেনি। এরই মধ্যে শিল্পতালুকে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও তৃণমূলের গোলমাল হয়ে গিয়েছে।

স্থানীয় পাট চাষি ইমরান শেখ, ফারুখ শেখ, রতন মণ্ডলরা বলেন, “পাট চাষ করে লাভ হচ্ছে কই? শিল্পতালুকও সাত বছরেও হল না। তাই পাট চাষ কমিয়ে এখন পেঁয়াজ সহ অন্য ফসল চাষ শুরু করেছি।”

মুর্শিদাবাদ জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিল্পতালুকে ১৮৭.৩ একর জায়গায় শিল্পের জন্য ৩৩২টি প্লট আছে। এখনও পর্যন্ত তিনটি প্লট বিদ্যুৎ দফতর থেকে নেওয়া হয়েছে। বাকি তালুক শিল্পের জন্য রাখা হয়েছে।” কিন্তু সেখানে শিল্প কবে হবে? উত্তর মেলে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন