ফের খুনের মামলায় নাম জড়াল অধীরের

বহরমপুরে তৃণমূলকর্মী খুনের মামলা চলছে। ফের একটি খুনের ঘটনায় নাম জড়াল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। মুর্শিদাবাদের সীমান্তে জলঙ্গির পরাশপুর চর এলাকায় বুধবার দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাদল শেখ (২৮) নামে এক যুবক খুন হন। ঘটনার পরেই তাঁকে দলের সক্রিয় কর্মী দাবি করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর ও ডোমকল শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:৩৩
Share:

কোচবিহারে প্রচারে অধীর। শুক্রবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

বহরমপুরে তৃণমূলকর্মী খুনের মামলা চলছে। ফের একটি খুনের ঘটনায় নাম জড়াল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর।

Advertisement

মুর্শিদাবাদের সীমান্তে জলঙ্গির পরাশপুর চর এলাকায় বুধবার দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাদল শেখ (২৮) নামে এক যুবক খুন হন। ঘটনার পরেই তাঁকে দলের সক্রিয় কর্মী দাবি করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাতে মোট ২৮ জনের বিরুদ্ধে জলঙ্গি থানায় অভিযোগ জানান নিহত বাদলের দাদা শাহাদুল শেখ। তালিকায় শেষতম নামটি অধীর চৌধুরীর। শাহাদুল শেখের অভিযোগে লেখা, ‘আমার মনে হয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর চক্রান্তে ওই খুন হয়েছে।’

গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে বহরমপুরে খুন হয়েছিলেন কামাল শেখ নামে এক তৃণমূলকর্মী। ওই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পরে অধীরকে ‘পলাতক’ দেখিয়ে পুলিশ আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। লোকসভা ভোটের আগে ফের একটি খুনের মামলায় নাম জড়ানোয় ক্ষিপ্ত অধীর বৃহস্পতিবার কোচবিহারের হরিণচওড়ায় দলীয় সভায় বলেন, “চোরাকারবারিদের মারামারিতে একজন খুন হয়েছে। আমি কাল থেকে জেলার বাইরে প্রচারে থাকা সত্ত্বেও ওই ঘটনায় আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”

Advertisement

তাঁর দাবি, “কংগ্রেসের উত্থানে দিদি আতঙ্কিত হয়ে পুলিশকে ব্যবহার করছেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আগেও হয়েছে।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি অবশ্য দাবি করেন, “গত ৫ এপ্রিল কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বাদল। তারই বদলা নিতে কংগ্রেসের লোকেরা ওঁকে খুন করেছে।” তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীরের বক্তব্য, “অভিযোগ করেছেন নিহতের বাড়ির লোকেরা। আমরা দলীয় ভাবে কোনও অভিযোগ করিনি। তাই আমাদের দিকে আঙুল তোলার কোনও যুক্তি নেই।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জলঙ্গির কাটাবাড়ি এলাকায় বাড়ি বাদলের। বছর চারেক আগে ফরাজীপাড়া চর এলাকায় এসে বিল্লাল মোল্লার মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। পুলিশের দাবি, এর আগে সীমান্তের চোরাকারবারের সঙ্গে বাদলের নাম জড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। সম্প্রতি পাচারের ঘাট দখল নিয়ে সমাজবিরোধীদের বিবাদ চলছিল এলাকায়। এছাড়াও পারাশপুর চর এলাকায় একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল চলছিল। জলঙ্গি ব্লক কংগ্রেস নেতা আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগ, ‘‘পাচার নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে কিছুদিন আগে দু’টি গোষ্ঠী তৈরি হয়। ওই দুই গোষ্ঠীর গণ্ডগোলের জেরে এই খুন। এর সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ নেই। ভোটের আগে রাজনৈতিক কারণে আমাদের নাম জড়াচ্ছে ওরা।’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগে অধীরবাবু ছাড়াও নাম আছে ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান, উপপ্রধান-সহ স্থানীয় নেতৃত্বের। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৬ (গুরুতর আঘাত), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ৩০২ (খুন), ৪২৭ (সম্পত্তির ক্ষতি), ১২০ বি/৩৪ (এক সঙ্গে অনেকে জড়িত), ২৫/২৭ (বেআইনি অস্ত্র) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। অধীর চৌধুরীর আইনজীবী পীযূষ ঘোষ জানান, যে ৬টি ধারায় মামলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি জামিনযোগ্য। বাকি পাঁচটি জামিন অযোগ্য ধারা।

পুলিশ জয়নুদ্দিন বিশ্বাস ও আশিস আখতার ওরফে ড্যানি নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। কংগ্রেস সমর্থক বলে এলাকায় পরিচিত তাঁরা। মুর্শিদাবাদের নতুন পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা বলেন, “বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি। আপাতত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন