জঙ্গিপুর আদালতে অভিযুক্তেরা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
রঘুনাথগঞ্জের এক বিজেপি নেতাকে খুনের অভিযোগে সিপিএমের ১০ জন নেতা ও কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন জঙ্গিপুরের ফাস্ট ট্রাক আদালতের (দ্বিতীয়) বিচারক সোমেশ প্রসাদ সিংহ। গত শুক্রবার দোষী সাব্যস্ত করে বৃহস্পতিবার এই সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে গুরুপদ মণ্ডল ও সুধীর মণ্ডল সিপিএমের লক্ষ্মীজোলা লোকাল কমিটির সদস্য। হিরন্ময় সরকার ও মানিক সরকার দলীয় সদস্য। পার্থ সরকার, আনন্দ সরকার, চাঁদসুখ সরকার, নবকুমার সরকার, অমল সরকার ও শ্যামাপদ মণ্ডল দলের প্রথম সারির কর্মী। মানিক সরকার মহম্মদপুর হাই স্কুলের শিক্ষক। হিরন্ময়বাবু ফ্রেজারনগর শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে এবং গুরুপদ মণ্ডল নতুনগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষকতা করেন। সাজাপ্রাপ্তরা সকলেই রঘুনাথগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। সরকারি আইনজীবী আফজাল উদ্দিন জানান, ২০০০ সালের ২১ জুন বিকেলে লালগোলা থেকে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন রঘুনাথগঞ্জের বীরেন্দ্রনগরের বিজেপি নেতা মনোরঞ্জন মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে ছেলে-সহ আরও চার জন ছিলেন। কুলগাছি গ্রামের কাছে দুষ্কৃতীরা মনোরঞ্জনবাবুদের তাড়া করে। সঙ্গের চার জন পালাতে পারলেও মনোরঞ্জনবাবু ধরা পড়ে যান। তাঁকে হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথারি কোপায় দুষ্কৃতীরা। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি। ওই ঘটনায় সিপিএমের মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেন নিহতের ছেলে মলিন মণ্ডল। নেপাল মণ্ডল নামে অভিযুক্তদের একজন মামলা চলাকালীন মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের পাশাপাশি দুটি গ্রাম বীরেন্দ্রনগর ও ফ্রেজারনগর। দুই গ্রামের মধ্যে মাঠ বরাবর একটি রাস্তা তৈরি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল সিপিএম ও বিজেপির মধ্যে। সেই সময় গ্রামে সিপিএমের নেতাদের কথাই ছিল শেষ কথা। অভিযোগ, দুই রাজনৈতিক দলের এই বিরোধের জেরে ওই এলাকায় খুন ও পাল্টা খুনের ঘট না ঘটে। ১৯৯৭ সালে মনোরঞ্জনবাবুর খুড়তুতো ভাই তথা বিজেপি কর্মী রঞ্জিত মণ্ডলকে বাড়িতে ঢুকে বোমা মেরে খুন করে দুষ্কৃতীরা। জঙ্গিপুর আদালতে সেই খুনের মামলা এখনও বিচারাধীন। ওই ঘটনার বছর দেড়েক পরে ফ্রেজারনগর গ্রামে সিপিএম নেতা হিরন্ময়বাবুর খুড়তুতো ভাই মহাবীর সরকারকে গুলি করে খুন করা হয়। এরপর ২০০০ সালে খুন হন মনোরঞ্জনবাবু। লক্ষ্মীজোলা লোকাল কমিটির সম্পাদক সিপিএমের সাহাবুদ্দিন শেখ বলেন, “সাজাপ্রাপ্তরা সকলেই সিপিএমের নেতা ও কর্মী। তাঁদের মধ্য চার জন দলীয় ও লোকাল কমিটির সদস্য। গ্রাম্য বিবাদে তাঁদের মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে গ্রামের বিজেপি নেতারা। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।”
আদালতে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণার পর জেলে যাওয়ার পথে হিরন্ময়বাবু বলেন, “পরিকল্পিত ভাবে সিপিএম কর্মীদের এই মামলায় মিথ্যে ভাবে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। ঠিক মতো পথ চলতে পারি না। আমার পক্ষে একজন মানুষকে তাড়া করে কুপিয়ে খুন করার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।” এ দিন খুনের মামলায় সিপিএম নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় শুনতে ওই দুই গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা ভিড় করেন আদালত চত্বরে। রায় ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের আত্মীয়-স্বজনরা। হাজির ছিলেন বিজেপির কর্মী, সমর্থকরাও। বিজেপির মুর্শিদাবাদ উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক সম্রাট ঘোষ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি কর্মীদের উপর বামেরা অত্যাচার চালিয়েছে। আজকের রায়ে সুবিচার পেলেন নিহতের পরিবার, বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।”