বোনের শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে জখম দাদা

বোনের আর্ত চিত্‌কার শুনে ছুটে গিয়েছিলেন কিশোরীর দুই দাদা-সহ মোট চার জন। গিয়ে দেখেন, ওই কিশোরীর হাত ধরে জোর করে অন্য দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জনা কয়েক মদ্যপ দুষ্কৃতী। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই প্রথমে বাদানুবাদ ও পরে দুষ্কৃতীরা হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথারি কোপায় হল চার জনকে। রবিবার রাতে কৃষ্ণগঞ্জের সীমান্তঘেঁষা গোবিন্দপুরের ওই ঘটনায় একজনকে কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল ও বাকি তিন জনকে গুরুতর জখম অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১০
Share:

বোনের আর্ত চিত্‌কার শুনে ছুটে গিয়েছিলেন কিশোরীর দুই দাদা-সহ মোট চার জন। গিয়ে দেখেন, ওই কিশোরীর হাত ধরে জোর করে অন্য দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জনা কয়েক মদ্যপ দুষ্কৃতী। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই প্রথমে বাদানুবাদ ও পরে দুষ্কৃতীরা হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথারি কোপায় হল চার জনকে। রবিবার রাতে কৃষ্ণগঞ্জের সীমান্তঘেঁষা গোবিন্দপুরের ওই ঘটনায় একজনকে কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল ও বাকি তিন জনকে গুরুতর জখম অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

সোমবার দুপুরে কিশোরীর পরিবারের তরফে মোট চার জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে শ্লীলতাহানি ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু সোমবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দপুরে মাথাভাঙা নদীর পাড়ে স্থানীয় একটি লিটিল ম্যাগাজিনের উদ্যোগে শনিবার থেকে শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রবিবার ছিল ওই অনুষ্ঠানের শেষ দিন। এ দিন নদীর ওপারে কুনে চাঁদপুর গ্রাম থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিল ওই ছাত্রী। ওই ছাত্রীর জানায়, রাত ১১টা নাগাদ সে তার খুড়তুতো দিদির সঙ্গে মাঠের পাশে একটি শৌচাগারে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে ওই চার জন মদ্যপ যুবক তাদের পথ আটকায়। ওই ছাত্রীর হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। সে চিত্‌কার করে উঠলে তার দুই দাদা-সহ মোট চার জন ছুটে আসেন। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে ওই ছাত্রীকে বাঁচাতে গেলে ওই দুষ্কৃতীরা হাঁসুয়া নিয়ে চড়াও হয়। ওই ছাত্রীর এক কাকিমাও জখম হয়েছেন।

Advertisement

ওই ছাত্রীর খুড়তুতো দাদা শক্তিনগর হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বলেন, “আমি বোনের চিত্‌কার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ওরা বোনের হাত ধরে টানাটানি করছে। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে হাঁসুয়ার কোপ মারে। আমি হাত ঠেকিয়ে নিজেকে কোনও মতে রক্ষা করি।” ওই ছাত্রীর দাদার কথায়, “রাতবিরেতে যাতে কোনও অঘটন না ঘটে সেই জন্যই সকলে একসঙ্গে ওই অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এমনটা যে হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।” গ্রামবাসীদের একাংশের কথায়, যে চার জন যুবক ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে তারা সকলেই ওই এলাকারই। অভিযুক্ত ওই চারজনই যে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত তা-ও কবুল করছেন গ্রামের অনেকেই। ওই কিশোরীর দাদা বলছেন, “আমরা মারধর যা খেয়েছি, ঠিক আছে। শেষ পর্যন্ত আমার বোনকে যে ওদের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছি সেটাই অনেক।”

এ দিকে, ওই খবর ছড়িয়ে পড়তে অনুষ্ঠান দেখতে আসা দর্শকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন। যদিও সেই সময় অনুষ্ঠান দেখতে হাজির ছিলেন কয়েকশো গ্রামবাসী। কিন্তু কেউই তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। তবে ওই ছাত্রীই জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের হাতে ধারাল অস্ত্র ছিল। এবং যেভাবে এলোপাথাড়ি ভাবে অস্ত্র ঘোরাচ্ছিল ভয়ে কেউই তাদের কাছে ঘেঁষতে পারেননি। তাঁর কথায়, “তারপরেও যে ভাবে ওই দুই ছাত্র আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে তার জন্য আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ।”

গ্রামের ভিতরে এ ভাবে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখে মুখ দিয়ে কথা সরছে না স্থানীয় গ্রামবাসীদের। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর কথায়, “এই কদিন আগে এই কৃষ্ণগঞ্জেরই ঘুঘড়াগাছিতে জমি বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন এক মহিলা। জখম হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এই এলাকাতেও দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য দেখে আমরাও সিঁটিয়ে গিয়েছি।”

এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, “এই ঘটনায় স্পষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই।” গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সিপিএমের তাপসী বিশ্বাস বলেন, “আগে এমন ধরনের ঘটনা আমাদের এলাকায় ঘটেনি। শুনেছি ছাত্রীর শ্লীলতাাহানির প্রতিবাদ করায় কয়েকজনকে কোপানো হয়েছে। গোটা ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। আমরা প্রশাসন জানাব দ্রুত যাতে দোষীদের গ্রেফতার করা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন