তাপস মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
রানাঘাট কলেজের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসের শিবির। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়টাও জমাট বাঁধতে থাকে। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে উড়তে থাকে সবুজ আবির। বাজনার তালে তালে নাচতে থাকেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। কলেজের ডান দিকে বামপন্থীদের শিবির। সেদিকের ছবিটা অবশ্য সকাল থেকেই একটু আলাদা। কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা তৃণমূল শিবিরের তুলনায় কম হলেও উৎসাহে কোনও ঘাটতি ছিল না। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে ভিড়টা ক্রমশ কমতে থাকে।
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তাপস মণ্ডল ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৫১ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের অর্চনা বিশ্বাস ভোট পেয়েছেন ২ লক্ষ ১ হাজার ৭৬৭। রানাঘাট লোকসভার সাতটা বিধানসভাতেই নিজের ‘লিড’ বজায় রেখেছেন তাপস মণ্ডল। বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশ ঘিরে সব দলের নেতা কর্মী থেকে সাধারণ সমর্থক সকলেই উৎসাহ নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন গণনাকেন্দ্রের আশপাশে। কিন্তু বেলা যত বেড়েছে বিরোধী দলের কর্মীদের উৎসাহ তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেই হতাশার ঢেউ ছুঁয়েছে প্রার্থীদেরও। এ দিন সকাল থেকে সব প্রার্থীই রানাঘাট কলেজের ভোট গণনাকেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন। একের পর এক ‘রাউন্ড’-এ ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও একে একে কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। একেবারে প্রথমেই এলাকা ছাড়েন সিপিএম প্রার্থী অর্চনাদেবী। মাঝপথে বেরিয়ে আসেন কংগ্রেস প্রার্থী প্রতাপকান্তি রায়। শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে আসেন বিজেপি প্রার্থী সুপ্রভাত বিশ্বাস। তবে তাপসবাবু শেষ পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রেই ছিলেন।
সিপিএম প্রার্থী অর্চনাদেবী বলেন, “মানুষ যে রায় দিয়েছে তা মেনে নেওয়া উচিত। আমরা তা মাথা পেতে নিচ্ছি। আমাদের ভোট কমেছে একথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। সর্বত্র কমবেশি একই চিত্র। আমরা বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করব।” কংগ্রেস প্রার্থী প্রতাপবাবু বলেন, “প্রচারে বেরিয়ে যথেষ্ট সাড়া পেয়েছি। কিন্তু তার প্রতিফলন দেখা গেল না। আমি হতাশ।” বিজেপির সুপ্রভাতবাবু বলেন, “মনে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য ভুল বুঝে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মোদিজী অনুপ্রবেশকারীদের কথা বলেছিলেন। সেটা হয়তো বুঝতে অনেকের অসুবিধা হয়েছে।”
এ দিকে জয় নিয়ে প্রথম থেকেই আশাবাদী ছিলেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তাপস মণ্ডল। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যবধান বাড়ানো। ভোট বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ায় সেই আশা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা রেখেই অনেক বেশি ভোটে মানুষ আমাকে জিতিয়েছেন। দায়িত্বও অনেক বেড়ে গিয়েছে।” তাপসবাবু বলেন, “কৃষি ব্যবস্থা, যোগাযোগ, তাঁত শিল্পের উন্নয়ন, নদী দূষণ সমস্যা প্রতিরোধ প্রভৃতি বিষয়ে এবার আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।”