বহরমপুরে যানজট বাড়াচ্ছে টুকটুক

এক যাত্রায় ভিন্ন ফল! দীর্ঘ দিনের যান-যন্ত্রণা থেকে বহরমপুরের মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে টুকটুক। আবার সেই টুকটুকের বাড়বাড়ন্ত ক্রমশ যন্ত্রণারও কারণ হয়ে উঠছে।অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা অতি প্রাচীন বহরমপুরে অটো কিংবা বাসের মতো কোনও গণপরিবহণ ব্যবস্থা কোনও কালে ছিল না। আজও নেই।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

শহর দাপাচ্ছে টুকটুক। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

এক যাত্রায় ভিন্ন ফল!

Advertisement

দীর্ঘ দিনের যান-যন্ত্রণা থেকে বহরমপুরের মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে টুকটুক। আবার সেই টুকটুকের বাড়বাড়ন্ত ক্রমশ যন্ত্রণারও কারণ হয়ে উঠছে।

অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা অতি প্রাচীন বহরমপুরে অটো কিংবা বাসের মতো কোনও গণপরিবহণ ব্যবস্থা কোনও কালে ছিল না। আজও নেই। ব্রিটিশ রাজত্বে এখানে পরিবহণ ব্যবস্থা বলতে ছিল গরুর গাড়ি, ঘোড়ায় টানা টমটম, অথবা পালকি। রাজপথে তখন পিচ-পাথর পড়েনি। কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা তখন দিবাস্বপ্ন। সন্ধ্যার পরে শহরের রাস্তার ধারে তখন টিমটিম করে জ্বলত কাশিমবাজারের প্রয়াত মহরাজা কৃষ্ণনাথের বিধবা স্ত্রী মহারানি স্বর্ণময়ীর সৌজন্যে কেরোসিনের লণ্ঠন। আর ছিল রেড়ির তেলের মশাল।

Advertisement

সেদিনের মাটির কাঁচা রাস্তায় প্রথমে ইট-সুরকি, তারপর পিচ-পাথর পড়েছে। অলিগলি এখন সিমেন্টের কংক্রিট ঢালাই আর রাজপথ মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অত্যাধুনিক ‘ম্যাস্টিস’ দিয়ে। রাজপথের বিবর্তনের পথ বেয়ে যানবাহনেও এসেছে পরিবর্তন। গরুর গাড়ি, ঘোড়ায় টানা টমটম, পালকি উধাও হয়ে গিয়েছে কবেই। সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিল পায়ে প্যাডেল করা তিন চাকার রিকশা। তার সঙ্গে ছিল ব্যক্তিগত দু’ চাকার সাইকেল। কয়েক বছরের পরিবর্তনে রাস্তায় এখন গিজগিজ করছে মোটরবাইক ও চার চাকার গাড়ি। সংখ্যায় কয়েক হাজার। সে সব তো ব্যক্তিগত পরিবহণ ব্যবস্থা। এ দিকে রিকশার লাগাম ছাড়া ভাড়া আর চালকদের তিরিক্ষি মেজাজে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছিলেন শহরের মানুষ। ঠিক সেই সময়েই আর্বিভাব হল ব্যাটরি চালিত, দূষণমুক্ত, রিকশার থেকে দ্রুতগামী ‘টকুটুক’। কেউ কেউ আবার বলেন ‘টোটো’। সেই টুকটুক চালকদের অধিকাংশ শিক্ষিত যুবক। তাঁদের ভদ্র ও মার্জিত ব্যবহারেও খুশি শহরের মানুষ।

বহরমপুর রিকশা চালক সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক শান্তিপদ দত্ত বর্তমানে টুকটুক চালক। তিনি জানান, বছর দেড়েক আগেও পঞ্চায়েত ও পুরসভা মিলিয়ে শহরে হাজার সাতেক রিকশা চলত। এখন রিকশার সংখ্যা শ’তিনেক আর টুকটুকের সংখ্যা হাজার দুয়েক।

খোদ বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলছেন, ‘‘উচ্চতার কারণে রিকশায় উঠতে নামতে প্রবীণ ও শিশুদের খুবই কষ্ট হত। টুকটুক আসার পরে সেই কষ্ট থেকে রেহাই মিলেছে। রিকশায় যেখানে ৫০ টাকা ভাড়া, সেখানে পৌঁছতে টুকুটুকে ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০ টাকা।” তার ফলে বহরমপুরে রিকশা এখন রীতিমতো অস্ত্বিত্ব সঙ্কটে।

কিন্তু বিপদ বেড়েছে অন্যত্র। কোনও নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে টুকটুক চালানো ও প্রয়োজনের তুলনায় টুকটুকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শহরের যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে এই টুকটুকই। তাছাড়া অধিকাংশ টুকটুক চালকদের কোনও প্রশিক্ষণ না থাকায় ভাঙছে ট্রাফিক আইন। বহরমপুর পুরসভা থেকে ইতিমধ্যে ১১০৯টি টুকটুকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তার উপরে রয়েছে শহর লাগোয়া ভাকুড়ি, হরিদাসমাটি, মণীন্দ্রনগর ও রাধারঘাট মিলে ৪টি পুরসভা থেকে আসা আরও হাজার খানেক টুকটুক। ফলে টুকটুক, মোটরবাইক ও অন্যান্য গাড়ির ভিড়ে কাদাই মোড়, খাগড়া চৌরাস্তা মোড়, রানিবাগান মোড়, সমবায়িকা মোড়, বহরমপুর স্টেশন- সহ বিভিন্ন এলাকা দিনভ’র যানজটে হাঁসফাঁস করে। সমস্যা এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছ যে, গত ২১ অক্টোবর যানজট কাটাতে পুলিশকে বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় ব্যাপক লাঠিচার্জ করতে হয়। ওই ঘটনায় ২টি টুকটুক ভাঙচুরও হয়।

প্রতিবাদে ওই দিনই শহরের সব টুকটুক চালকেরা পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে বহরমপুর থানার আইসি অরুণাভ দাসের কাছে স্মারকলিপি দেন। বহরমপুর টুকটুক সমিতির পক্ষে বুড়ো বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শহরের ভিতরে সুষ্ঠু ভাবে যাতে টুকটুক চলতে পারে তার জন্য পুজোর পরে পুরপ্রধান, পুলিশ ও টুকটুক সমিতি মিলিত ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আইসি জানিয়েছিলেন।” ওই প্রসঙ্গে বহরমপুরের এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্য দোকানের বাইরে পথের ধারে রাখছেন। ফলে যানজট বাড়ছে।” ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে ওই পুলিশ কর্তা বলেন, “সবে জগদ্ধাত্রী পুজো ও মহরম শেষ হল। এর পরে বৈঠক করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বহরমপুর টুকটুক সমিতির অন্যতম কর্তা দেবরাজ ঘোষাল অবশ্য যানজটের ব্যাখ্যায় বলেন, “যানজটের জন্য শুধুমাত্র টুকটুককেই দায়ী করাটা ঠিক হচ্ছে না। শহরের ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা ঠিকমতো নেই। যেটুকু রয়েছে তা আবার মেনে চলা হয় না। সমস্যাটা সেখানেই।”

পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “রুট, ভাড়ার তালিকা ও ট্রাফিক আইন মেনে যাতে টুকটুক চলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের ৩৪টি স্ট্যান্ড থেকে টুকুটুক চলাচল করবে।”

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-নদিয়া মুর্শিদাবাদ’।
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, নদিয়া মুর্শিদাবাদ বিভাগ,
জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন