ভোট দিয়েই উন্নয়ন চায় কুলোপাড়া

ভোট বয়কট করে নয়। বরং ভোট দিয়েই গ্রামের উন্নয়ন করতে চান কুলোপাড়ার বাসিন্দারা। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাটিয়ারি বানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটাতারের ওপারের গ্রাম কুলোপাড়া। গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় তিনশো। ভোটার রয়েছেন ৯৯ জন। হোগলবেড়িয়ার কাঁটাতারের ওপারের গ্রাম চর মেঘনার মতোই এ গ্রামেও ভোটের প্রচারে আসেননি রানঘাট লোকসভা কেন্দ্রের কোনও প্রার্থী। গ্রামবাসীরা বলছেন, “ওঁদের কর্তব্য ওঁরা করেননি। আমরা কিন্তু ভোট দিয়ে আমাদের কর্তব্য পালন করলাম।”

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০১:৩৭
Share:

ভোট শেষে গ্রামের পথে। —নিজস্ব চিত্র।

ভোট বয়কট করে নয়। বরং ভোট দিয়েই গ্রামের উন্নয়ন করতে চান কুলোপাড়ার বাসিন্দারা। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাটিয়ারি বানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটাতারের ওপারের গ্রাম কুলোপাড়া। গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় তিনশো। ভোটার রয়েছেন ৯৯ জন। হোগলবেড়িয়ার কাঁটাতারের ওপারের গ্রাম চর মেঘনার মতোই এ গ্রামেও ভোটের প্রচারে আসেননি রানঘাট লোকসভা কেন্দ্রের কোনও প্রার্থী। গ্রামবাসীরা বলছেন, “ওঁদের কর্তব্য ওঁরা করেননি। আমরা কিন্তু ভোট দিয়ে আমাদের কর্তব্য পালন করলাম।”

Advertisement

তারকাঁটার বেড়ার গায়ে লোহার গেট পেরিয়ে একটি বাগানের মধ্যে দিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলে তারপরেই গ্রামে ঢোকার রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে কলাবাগান, আমবাগান। তারপরেই ছোট্ট একটি গ্রাম, কুলোপাড়া। ওপারে বাংলাদেশ। গ্রামে নেই এর তালিকা এতটাই দীর্ঘ যে কী কী আছে সেটা বলা-ই অনেক সহজ। বছর দু’য়েক আগে গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে। আর স্থানীয় পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ১৮০ মিটার কংক্রীটের রাস্তা হয়েছে। মাটি কিংবা পাটকাঠির দেওয়াল আর টিন ও টালির ছাদ দেওয়া বাড়িগুলোতে ষাটটি পরিবারের বাস। অভাব যাঁদের নিত্যসঙ্গী। গ্রামের সকলেই কৃষিকাজ করেন। বাজার-হাট, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনকি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র সব-ই রয়েছে কাঁটাতারের এপারে।

গ্রামের বাসিন্দা বাহিবুর মণ্ডল, মহম্মদ চাঁদ মণ্ডলরা সমস্বরে বলছেন, “ভোটের আগে সকল রাজনৈতিক দলই প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ভোট ফুরোলেই আমাদের কথা আর কেউ মনে রাখে না। আমাদের গ্রামে তো ভোটের প্রচারেও কেউ আসেননি। গ্রামের সবাই একবার ভোট বয়কট করার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে পরে আমরা সকলেই ঠিক করি ভোট বয়কট করাটা কোনও কাজের কথা নয়। ভোট দিয়েই আমরা প্রশাসন ও সরকারকে বাধ্য করাব গ্রামের উন্নয়ন করতে।” সেই মতো সোমবার ভোটের দিন গোটা গ্রাম কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে সকাল সকাল ভোট দিতে এসেছিলেন মাটিয়ারি বাগানপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে। গ্রামের সাহিদা মণ্ডল, চিয়ারবানু মণ্ডলরা বলছেন, “রোদের যা তেজ তাতে সকাল সকাল ভোট দিতে এসেছিলাম। এখন বাড়ি গিয়ে আবার হেঁসেলের কাজ করতে হবে।” কাঁটাতারের পাশের জমিতে খেতে কাজ করছিলেন গ্রামের বাসিন্দা নয়জেল মণ্ডল। তিনি বলছেন, “অন্য সীমান্তের মতো এই এলাকাতে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের কোনও অত্যাচার নেই। কিন্তু কাঁটাতারের বাইরে গ্রাম হওয়ার জন্য অনেক অসুবিধা রয়েছে। গ্রামে কিছুই নেই। তাই যে কোনও প্রয়োজনেই কাঁটাতারের বেড়ার ওদিকে যেতে হয়। কিন্তু তারপরেও আমরা ভোট দিতে গিয়েছিলাম।”

Advertisement

মাটিয়ারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়া সাগর মণ্ডল, মহম্মদ জাহাঙ্গির মণ্ডলদের কথায়, “সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত খোলা থাকে কাঁটাতারের গায়ের লোহার গেট। ওই সময়ের মধ্যে পড়তে যাওয়া, স্কুল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করে ফেলতে হয়।”

স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্যা সপুরা মণ্ডল বলছেন, “বুথের ১০৩০ ভোটারের মধ্যে ৯৯ জন ভোটার কুলোপাড়ার। বছরখানেক আগে গ্রামের ওই রাস্তা করতে গিয়েও অনেক সমস্যা হয়েছিল। পরে অবস্য বিএসএফ ও বিজিবি বৈঠক করার পর সমস্যার সমাধান হয়। এটা ঠিক যে গ্রামের মানুষের অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে আমরাও চেষ্টা করছি এলাকার উন্নয়ন করতে।” কিন্তু প্রার্থীরা এই গ্রামে আসার সময়টুকুও পেলেন না? উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন