মাঝগঙ্গায় চর, ভাঙনে উদ্বেগ

গঙ্গার বুকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দু’টি বিশাল চর। আর সেই চর নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন রাজ্যের সেচ দফতরের কর্তারা। চরের জন্য নদীর গতিপথ যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে আগামী বর্ষার মধ্যেই ফরাক্কার অর্জুনপুর থেকে ধুলিয়ান শহর পর্যন্ত গঙ্গার ডান পাড়ের বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙনের গ্রাসে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তা রুখতে রাজ্য সেচ দফতরের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগ ধুলিয়ানের জন্য ১৬০ কোটি ও মুস্কিনগর এলাকার জন্য ২০ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্প তৈরি করে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তবে, প্রকল্পের অনুমোদন বা আর্থিক সাহায্য নিয়ে কোনও আশ্বাস মেলেনি।

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪১
Share:

গঙ্গার বুকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দু’টি বিশাল চর। আর সেই চর নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন রাজ্যের সেচ দফতরের কর্তারা।

Advertisement

চরের জন্য নদীর গতিপথ যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে আগামী বর্ষার মধ্যেই ফরাক্কার অর্জুনপুর থেকে ধুলিয়ান শহর পর্যন্ত গঙ্গার ডান পাড়ের বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙনের গ্রাসে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তা রুখতে রাজ্য সেচ দফতরের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগ ধুলিয়ানের জন্য ১৬০ কোটি ও মুস্কিনগর এলাকার জন্য ২০ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্প তৈরি করে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তবে, প্রকল্পের অনুমোদন বা আর্থিক সাহায্য নিয়ে কোনও আশ্বাস মেলেনি।

ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্রকুমার হালদার ভাঙন পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা মেনে নিলেও স্পষ্টই বলে দেন, “এখন কোনও ফান্ড নেই। ফরাক্কা ব্যারাজের হাতে কর্মীও নেই। তাই ৬-৭ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ করা সম্ভব নয়।”

Advertisement

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাক্কা বাঁধ থেকে মাইল চারেক দূরে গঙ্গার মাঝ বরাবর প্রায় দেড় কিলোমিটার চওড়া বিশাল চর বাগমারি সেতুর আগে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ৫০০ মিটার দূরে ধুলিয়ান শহরের ফেরি ঘাট পর্যন্ত একই ভাবে গজিয়ে উঠেছে আরও একটি বালির চর। নদীর মাঝ বরাবর এই ভাবে চর পড়ায় গঙ্গার জল প্রবাহের গতিবেগের তীব্রতা প্রচণ্ড ভাবে বেড়েছে বাঁ ও ডান পাড় ঘেষে। ফলে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফরাক্কার সাঁকোপাড়া, মুস্কিনগর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার সমস্ত পাথর দিয়ে বাঁধানো গার্ড ওয়াল ধসে গেছে। এখন শীতে জল নেই। তা সত্ত্বেও এই ভাবে ধস নামায় উদ্বিগ্ন সেচ দফতরের কর্তারা।

এমনিতে মুর্শিদাবাদ জেলায় সর্বত্র গঙ্গা চওড়ায় প্রায় তিন কিলোমিটার। কিন্তু ধুলিয়ানে নদীর পরিধি সবচেয়ে কম, মাত্র দেড় কিলোমিটার। তাছাড়া ফরাক্কা থেকে বাগমারি পর্যন্ত নদী পাড় সরলরেখা বরাবর হলেও ধুলিয়ান পর্যন্ত ডান পাড়ে পাঁচটি ছোট ছোট বাঁক রয়েছে। যেখানে স্রোতের ধাক্কা আরও বেশি। ধুলিয়ানের উপপুরপ্রধান দিলীপ সরকারের আশঙ্কা, “এর আগে গঙ্গা ভাঙনে তিন বার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে শহরের। তিন বারই নতুন করে তৈরি হয়েছে জনপদ। ফের যদি ভাঙনের কবলে পড়ে, তাহলে শুধু শহর নয় ২ কিলোমিটার দূরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রেলপথের অস্তিত্বও সঙ্কটে পড়বে।” ভাঙনের ধাক্কায় বিপন্ন মুস্কিনগর গ্রামের গঙ্গা থেকে ফুট পাঁচেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে দোতলা প্রাথমিক স্কুল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওবাইদুর রহমান বলেন, “প্রতিনিয়ত যেভাবে নদীর জল ধাক্কা মারছে পাড়ে, তাতে স্কুল বাড়ি যে কোনও মুহূর্তে ধসে পড়বে। দু’মাস আগে অস্থায়ী ভাবে বালির বস্তা ফেলেছে সেচ দফতর।” ধুলিয়ানের বাসিন্দা মেহেবুব আলম শহরের শতবর্ষ প্রাচীন কাঞ্চনতলা হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক। তিনি বলেন, “নদীর পাড়েই স্কুল। পাশে মসজিদ, শ্মশান, কবরস্থান। আগামী বর্ষা পর্যন্ত নদী পাড় নিয়ে চিন্তায় রয়েছি আমরা।”

মুর্শিদাবাদের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত দাস মেনে নেন, নদীর বুকে চরের এলাকা ক্রমশ যে ভাবে বিস্তৃত হচ্ছে তাতে দুই চরের মধ্যে ৫০০ মিটার ফাঁকা জায়গাটাও পূরণ হয়ে যাবে মাস তিনেকের মধ্যে। সেক্ষেত্রে আসন্ন বর্ষার আগেই স্পার বাঁধানোর কাজ শুরু না করা গেলে ডান পাড়ের গ্রামগুলিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। জয়ন্তবাবু বলেন, “ফরাক্কার ডাউন স্ট্রিমে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাঙন রোধের কাজ করার কথা ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের। এই নিয়ে চুক্তিও রয়েছে রাজ্য সরকারের সঙ্গে। কিন্তু এখন ধুলিয়ান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের মধ্যেও গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজের দায়িত্ব নিতে চাইছে না ফরাক্কা ব্যারাজ।” জয়ন্তবাবু জানান, গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের গঙ্গা ভাঙন সংক্রান্ত টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক হয়েছে ফরাক্কায়। সেখানে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের কাছে ভাঙন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এই ব্যাপারে তারা এখনই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিতে পারছে না। উল্টে ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় এনে রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে ভাঙন রোধের কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন কেন্দ্রের প্রতিনিধি। কিন্তু সেক্ষেত্রে সমস্যা হল কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন নিয়ে কাজ শুরু করতে অনেকটা সময় লাগবে। তাছাড়া কেন্দ্রের মতো রাজ্যকেও প্রকল্পের অর্ধেক খরচ বহন করতে হবে। এত টাকা দেওয়ার রেস্ত নেই রাজ্যের। তাই ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষকে দিয়েই কাজটা করিয়ে নিতে চাইছে সেচ দফতর।

দুই পক্ষের টানাপড়েনে প্রশ্নের মুখে প্রকল্পের ভবিষ্যত্‌। সঙ্কটে বিস্তীর্ণ জনপদের অস্তিত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন