উদ্বোধনে মান্নান, সুবোধ, সৌমিক। —নিজস্ব চিত্র।
বইমেলাতেও লগ্নি কেলেঙ্কারি পিছু ছাড়ল না তৃণমূলের। বুধবার বহরমপুর বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন, মান্নান পুত্র সৌমিক হোসেন, আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত কবি সুবোধ সরকারের পাশেই বসে থাকতে দেখা গেল আবু সায়েম রিপনকে। একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মালিক রিপনের নামে প্রতারণার মামলা করেছেন একাধিক ব্যক্তি। আদালতের নির্দেশে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ রিপনের নামে পুলিশ প্রতারণার মামলা করলেও, এখনও অবধি তাকে গ্রেফতার করেনি।
সারদা মামলায় যখন শাসকদল জেরবার, তখন কী করে একজন বেআইনি লগ্নিসংস্থার মালিক সরকারি বইমেলার উদ্বোধনের মঞ্চে জায়গা পেল? সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতেই প্রাক্তন সাংসদ এবং বইমেলার স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি মান্নান হোসেন প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্দেশে ক্ষোভ উগরে দেন। এক অতিরিক্ত জেলাশাসকের উদ্দেশে তাঁর উক্তি, “চিটফান্ডের ওদের কে ডাকতে বলেছিল? কেন ডাকা হয়েছিল?” কবি সুবোধ সরকার অবশ্য “আমি বহিরাগত,” বলে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন।
রিপনকে নিয়ে তৃণমূলের এমন অস্বস্তি অবশ্য এই প্রথম নয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, গত বছর ১১ নভেম্বর ডোমকলে যুব তৃণমূলের জনসভাতেও মঞ্চে উঠেছিলেন রিপন। তিনি তৃণমূলের এক পরিষদীয় সচিবের আপ্ত সহায়ক হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন। সেদিনের সভার প্রধান বক্তা ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন ইন্দ্রনীল সেন প্রায় তেড়ে গিয়ে ওই আপ্তসহায়ককে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। মৃদু আপত্তি তোলায় ইন্দ্রনীলের কাছে থেকে পরিষদীয় সচিবও প্রকাশ্যে সবার সামনে বকুনি খান। ইন্দ্রনীল তাঁকে বলেছিলেন, “আপনি জানেন না, চিটফান্ড কাণ্ডে ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মমলা চলছে।” এর পরেও কী করে রিপন এ দিন বইমেলার মঞ্চে জেলার শীর্ষ নেতাদের পাশে ঠাঁই পেল, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।
আবু সায়েম রিপনের লগ্নিসংস্থার নাম ‘পিস ভ্যালি এনহান্সড ফাইনান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি।’ ওই সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত হয়ে গত বছর একাধিক ব্যক্তি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। অভিযোগ, পুলিশ গোড়ায় অভিযোগ নিতে রাজি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে পুলিশ বাধ্য হয় এফআইআর নিতে। কিন্তু তারপরেও তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি পুলিশ, নালিশ প্রতারিত আমানতকারীদের।
সেই রিপন কী করে বইমেলার মঞ্চে এলেন, প্রশ্ন করতে কবি সুবোধ সরকার বলেন, “আমি বহিরাগত। তাই আমার জানা নেই। তাছাড়া ট্রেনে বা প্লেনে চিটফান্ড মালিক টিকিট কেটে উঠলে সহযাত্রীরা চিটফান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে না।” টিকিট কেটে ট্রেনে বা প্লেনে যাতায়াতের সঙ্গে বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চ ‘শেয়ার’ করার তুলনা চলে না বলতেই মান্নান হোসেন প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্দেশে বকাবকি শুরু করেন। জেলা তৃণমূলেরই এক নেতা বলছেন, “বইমেলা কমিটি নিয়ে খোদ তৃণমূলেই আমরা-ওরার বিভাজন। তারপর মঞ্চে চিটফান্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। এ বারের বইমেলায় বইয়ের থেকেও দেখছি বেশি কাটছে বিতর্ক!”