বিজেপি-র রাজ্য কমিটির বৈঠকে নদিয়া জেলার নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের ফয়সালা হবে, আশা করছে নদিয়ার বিজেপি সমর্থকরা। আজ, শনিবার কলকাতায় শুরু হবে দু’দিনের বৈঠক।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারপর্ব থেকেই নদিয়ায় বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। এক দিকে জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী, অন্যদিকে সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়, গত লোকসভা নির্বাচনে যিনি কৃষ্ণনগরে দলের প্রার্থী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর চাপা থাকেনি। সত্যব্রতবাবু, তথা জলুবাবুর পরাজয়ের পর দলে ফাটল আরও চওড়া হয়েছে। রাজ্য কমিটির এই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা হবে, সেটা এক প্রকার ধরেই নিয়েছেন দু’পক্ষই।
যদিও সেই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর দাবি, নদিয়ায় নেতৃত্ব নিয়ে কোনও সংকট নেই, তাই আলোচনার প্রয়োজনও নেই। যদিও বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, এর মধ্যে নদিয়া জেলার বেশ কিছু ব্লকের সভাপতি ও কর্মীরা জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়ে তাঁদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। এমনই এক ব্লক সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে জেলার বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি। লোকসভা নির্বাচনে আমাদের কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের প্রার্থীর সঙ্গে অসহযোগিতার পাশাপাশি, আমাদের সঙ্গে জেলা সভাপতির দুর্ব্যবহার, সমস্ত বিষয়ই আমরা জানিয়েছি।” তাঁদের আশা, রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করে একটা স্থায়ী সমাধান করবেন। যদিও রাহুলবাবুর দাবি, “এমন কোনও চিঠি আমরা পাইনি।” তবে ঘনিষ্ঠ মহলে রাজ্য নেতৃত্ব স্বীকার করেন, নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যা একটা রয়েছে। জেলা সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সবাইকে চলতে হবে।
কর্মীদের অবশ্য আশঙ্কা, এখনই যদি রাজ্য নেতৃত্ত্ব কড়া হাতে নদিয়ার সংগঠনের হাল না ধরেন, তাহলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। তাতে সংগঠনের ক্ষতিই হবে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে আগামী বিধানসভা ভোটে। এ বার লোকসভা ভোটে জলুবাবুর পরাজয়ের কারণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় চাপান-উতোর। প্রকাশ্যেই পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে থাকেন। কল্যাণবাবুদের দাবি, সংগঠনকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে নিজের লোক দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়েই ভরাডুবি হয়েছে জলুবাবুর। তিনিই দলের সংগঠনকে কাজে লাগাননি। আবার সত্যব্রতবাবুও তাঁর হারের পিছনে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ,অনেক জেলা ও ব্লক স্তরের নেতারা জলুবাবুর হয়ে নির্বাচনে লড়াই করলেও, জেলা সভাপতি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা সব রকম ভাবে অসহযোগিতা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন।
এর মধ্যে কৃষ্ণনগরের জলঙ্গী নদীর ধারে একটি লজে তাঁর হয়ে যারা নির্বাচনে লড়াই করেছেন, সেই সব নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য একটি সভার আয়োজন করেছিলেন জলুবাবু। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্য রাজ্য নেতারাও। কিন্তু সেই সভায় আসেননি জেলা সভাপতি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা। প্রকাশ্যে জেলা কমিটি পরিবর্তনের দাবিও তোলেন জলুবাবুর অনুগামীরা।
এই বৈঠকে যদি কোনও রকম সমাধান সূত্র না বের হয় তাহলে আগামীদিনে এই গোষ্ঠীকোন্দল আরও বাড়বে বলে মনে করছেন দলের অনেকেই। কারণ ২০১৫ সালে দলের সাংগঠনিক নির্বাচন। কল্যাণবাবু পরপর দু’বারের সভাপতি। তিনি এবার আর সভাপতি হতে পারবেন না। দলের এক জেলা নেতা বলেন, “আমাদের দলের নিয়ম, একজন দু’বারের বেশি সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। ফলে কল্যাণবাবুকে সরে যেতে হবে। তাই তাঁর জায়গায় কে সভাপতি হবেন তাই নিয়েই দুই গোষ্ঠীর চাপান-উতোর আরও বাড়বে।” যেহেতু অঞ্চল সভাপতিদের দ্বারা নির্বাচিত ২৭ জন ব্লক সভাপতি আবার জেলা সভাপতি নির্বাচন করেন, তাই একেবারে নিচু স্তরে নিজেদের ঘর গোছাতে এখন থেকেই্ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দু’পক্ষের নেতারা। প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করার চাইতে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দলেরই ক্ষতি করবে, উদ্বিগ্ন সাধারণ কর্মীরা।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দলে দলে অন্য দলের এর কর্মী-সমর্থকরা বিজেপিতে যোগ দিতে শুরু করেছেন। ফলে দলের সংগঠন ক্রমশ বাড়ছে সেই পরিস্থিতিতে দলের নিচু তলার নেতা-কর্মীরা দ্রুত ঘর গোছাতে চাইছেন। রাজ্য কমিটিতে কোনও একটা ফয়সালা হবে, এমনই আশা করছেন তাঁরা।