শৌচাগার নির্মাণে পিছিয়ে মুর্শিদাবাদ

শৌচাগার নির্মাণে এ রাজ্যে বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে পড়েছে মুর্শিদাবাদ। রাজ্যের ১৯টি জেলার মধ্যে মুর্শিদাবাদ রয়েছে ১৭তম স্থানে। মুর্শিদাবাদের পরে রয়েছে পুরুলিয়া ও দার্জিলিং। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ এর তরফে এমন তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরিসংখ্যান বলছে, মুর্শিদাবাদে ৩৯ শতাংশ পরিবার শৌচাগারহীন। ১৬ শতাংশ স্কুলেই কোনও শৌচাগার নেই।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৮
Share:

শৌচাগার নির্মাণে এ রাজ্যে বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে পড়েছে মুর্শিদাবাদ। রাজ্যের ১৯টি জেলার মধ্যে মুর্শিদাবাদ রয়েছে ১৭তম স্থানে। মুর্শিদাবাদের পরে রয়েছে পুরুলিয়া ও দার্জিলিং। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ এর তরফে এমন তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরিসংখ্যান বলছে, মুর্শিদাবাদে ৩৯ শতাংশ পরিবার শৌচাগারহীন। ১৬ শতাংশ স্কুলেই কোনও শৌচাগার নেই।

Advertisement

‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পে মুর্শিদাবাদের জন্য ২০০১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও জেলা প্রশাসন হাতে পেয়েছে মাত্র ১৪২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে খরচ করতে পেরেছে ১১৯ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। প্রাপ্ত টাকার সবটা খরচ করতে না পারায় বকেয়া ৭৮ কোটি টাকাও আর হাতে পায়নি জেলা প্রশাসন। ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পেরই এখন নতুন নামকরণ হয়েছে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করছে শৌচাগার নির্মাণের উপর। ১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে যেখানে সামগ্রিক ভাবে এই শৌচাগার প্রকল্পে সাফল্য ৮১ শতাংশ, স্কুলের ক্ষেত্রে সে সাফল্য ৯৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ৬২ শতাংশই শৌচাগার গড়ে তোলা গিয়েছে, তখন মুর্শিদাবাদ যে কতটা পিছিয়ে জেলার যে কোনও গ্রামে গেলেই তা নজরে পড়ে। অথচ পড়শি নদিয়া জেলাতে শৌচাগার প্রকল্পের হার ১০০ শতাংশ। স্কুলেও শৌচাগার নির্মাণে নদিয়ায় সাফল্যের হার ১০০ শতাংশ। পাশের জেলা বীরভূমও ওই প্রকল্পে বাড়িতে ৮১ শতাংশ ও স্কুলে ১০০ শতাংশ সফল। সাফল্যের নিরিখে উত্তর ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া ও বর্ধমান রয়েছে বেশ উপরের সারিতে। সেখানে মুর্শিদাবাদে এমন অবস্থা কেন?

শৌচাগার নির্মাণে দীর্ঘদিন থেকে যে সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করে তার অন্যতম ফরাক্কা ব্লক বিড়ি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক আশিস দাস বলেন, “বাড়িতে শৌচাগার গড়ার আগ্রহ আছে বহু মানুষেরই। কিন্তু সে ভাবে সরকারি উদ্যোগ নেই। ফরাক্কায় এ বারে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩০ হাজার পরিবার। এখনও পর্যন্ত ৬ হাজার পরিবারের কাজ শেষ হয়েছে। ৯০ ভাগ টাকা দিচ্ছে সরকার। ১০ ভাগ টাকা দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট পরিবারের। পরিবার থেকে যথারীতি টাকা জমা দিয়ে আবেদনও করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারি তরফে যে টাকা আমাদের পাওয়ার কথা তা সময় মতো দেওয়া হচ্ছে না। ফলে কাজের আগ্রহ হারাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। সেই জন্য কাজ এগোচ্ছে না।”

Advertisement

নবগ্রাম তফসিলি মিলন সঙ্ঘ এই প্রকল্পে কাজ করছে নবগ্রাম ব্লকে। সংস্থার সম্পাদক অতুল দাস বলেন, “ব্লকে ৩৫ হাজার পরিবারে শৌচাগার তৈরির বরাত পেয়েছি। এ পর্যন্ত মাত্র ৩৯৫টি পরিবারে শৌচাগার তৈরি হয়েছে। বকেয়া টাকা সময় মতো না পাওয়ার ফলেই কাজ এগোচ্ছে না।” তিনি জানান, একটি শৌচাগারের জন্য ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ। তার মধ্যে ২ হাজার টাকা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট পরিবারকে। দরিদ্র পরিবারগুলির পক্ষে কখনও কখনও সেই টাকা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। কাজ থমকে যাওয়ার এটাও একটা কারণ।

নওদা গ্রামীণ বিকাশ কেন্দ্রের লক্ষ্য রয়েছে ৩৬০০ শৌচাগার তৈরির। সংস্থার কর্তা নাসিরুদ্দিন শেখ বলেন, “শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেই তো হবে না। প্রকল্পের নাম বদলে স্বচ্ছ ভারত মিশন করা হয়েছে। শৌচাগারের মডেলেও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এখনও সে ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি আমাদের। ফলে কাজ শুরুই করতে পারছি না।”

ভগবানগোলার সেবাব্রত সংস্থা শৌচাগার নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে ভগবানগোলা ১ ও ২ এবং বহরমপুর ব্লকের। সংস্থার সম্পাদক বীরেন মণ্ডল বলেন, “ভগবানগোলা ১ ব্লকে এখনও সাড়ে ১৮ হাজার, ভগবানগোলা ২ ব্লকে ৩০ হাজার ও বহরমপুরে ৫০ হাজার শৌচাগার নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের সংস্থার। কিন্তু পরিকল্পনা ও বরাদ্দ কোনও কিছুই আমাদের জানা না থাকায় কাজ আটকে রয়েছে।”

বাস্তবে জেলার শৌচাগার পরিস্থিতি কেমন? সাগরদিঘির গ্রাম পাউলি। বছর খানেক আগে এই গ্রামে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হন শতাধিক গ্রামবাসী। প্রচার চলে ঘরে ঘরে শৌচাগার গড়ার। কিন্তু এক বছর কেটে গেলেও এখনও গ্রামের ৯০ শতাংশ বাড়ি শৌচাগারহীন। জেলায় শৌচাগার প্রকল্প যে পিছিয়ে পড়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার অভিজিত্‌ লাহিড়ি। তাঁর সাফাই, “প্রথমে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় বিপিএল পরিবারগুলিকে নিয়ে। ফলে ওই পরিবারের সদস্যেরা সবসময় প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দিতে পারছিলেন না। পরে সব পরিবারকেই এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পরে প্রকল্পের নামের বদল ঘটলেও সে সম্পর্কে কোনও নির্দেশিকা এখনও আমাদের হাতে আসেনি। এই ভাবেই বিভিন্ন সময়ে কাজে দেরি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।” তাঁর সংযোজন, “তবে জেলায় আমরা নিজেরাই ১৩ হাজার টাকার এস্টিমেট করে শৌচাগারের একটা মডেল বানিয়েছি। খুব শীঘ্র সে কাজ শুরু হবে।” তবে ১২ হাজার টাকার শৌচাগার প্রকল্পেই যখন সাফল্য মিলল না তখন এই নতুন প্রকল্প কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন