সদ্য আঠারোর মেয়েটি তার ছ’মাসের কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কখন বলছে “ছেলে না হয়ে ভাল হয়েছে, কে জানে বেঁচে থাকলে বাপের মতোই হত।” আবার কখনও মেয়ের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেয়ের গায়ে নয়, মৃতদেহের গায়ে।
সোমবার ডোমকল থানার বাজিতপুরের ঘটনা। ছ’মাসের পাখির মাথার একটা দিক ফুলে রক্ত জমে রয়েছে। পেটেও বেশ কয়েকটি আঁচড়ের দাগ। এক বার নয় দু’বার চিকিত্সকরা জানিয়েছেন বেঁচে নেই পাখি। মা রূপালি শীল মেয়েকে খুন করার অভিযোগ জানিয়েছে স্বামী রতন শীলের বিরুদ্ধে।
জানা গিয়েছে সোমবার সকাল ৮ টায় খাওয়া দাওয়া সেরে মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রতনবাবু। ঘণ্টা দুয়েক পরে ফিরে এসে বাড়িতে বলে মেয়ে আর তাকাচ্ছে না। রূপালি বলে, “প্রথমে ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবেছিলাম। কিন্তু বিছানায় শোয়াতে গিয়ে দেখি মেয়ের শরীর অসার, হাত পা ঠাণ্ডা।” এরপরই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পাখিকে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে মাদকাসক্ত রতনবাবু মেয়ের জন্মের পর থেকেই বিরক্ত ছিলেন তার উপর। তাঁর দাদা স্বপন শীলও অভিযোগ করেছেন তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “মাস খানেক আগেও একবার ছোট্ট মেয়েটাকে মারধর করেছিল ভাই। তখন আমরা বলতে গিয়েছিলাম বলে আমাদের যা খুশি তাই বলেছিল। আজকের ঘটনার পরও আমরা যখন বলতে যাই তখন রতন আমাদের কেটে ফেলার হুমকি দেয়।”
ঘটনা জানাজানি হতেই গ্রামের বাসিন্দারা রতনবাবুকে ধরে ফেলেন। খুঁটিতে বেঁধে চলে মারধর। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। আটক করা হয় রতনবাবুর মাকেও।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে আঘাত জনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে ছ’মাসের শিশুটির। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট না এলে কিছু সম্ভব নয়। ডোমকলের এসডিপিও অমরনাথ কে বলেন, ‘‘রতন শীলের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী মেয়েকে খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে ওই যুবক নেশাগ্রস্থ। তবে ঠিক কেন মেয়েকে খুন করলেন সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।”
বছর পাঁচেক আগেই রতন শীল মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাইকেল চুরি কারই ছিল তাঁর পেশা। তবে আগে তিনি পাড়ায় ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিলেন। শাঁখার কাজ করে রোজগারপাতিও করতেন। নেশার খপ্পরে পড়ে ছেলে বিগড়ে যাচ্ছে ভেবে ছেলের বিয়ে দেয় পরিবার।
বিয়ে হয় ষোলো পেরোনো কিশোরী রূপালির সঙ্গে। আঠারো না পেরোতেই মা হয় রূপালি। সেটা অবশ্য ডোমকলের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে বলার মতো কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু কিশোরী বধূটির সংসার সুখের হয়নি। মাদকাসক্ত স্বামীর সব অত্যাচারের মুখে পড়ে সে। রূপালি জানিয়েছে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে সেই অত্যাচার মাত্রা ছাড়াচ্ছিল। মেয়ের জন্মের পরেই গোমড়া মুখে তিনি জানিয়েছিলেন ছেলে হলেই ভাল হত। চলত মারধর।
তবে পাড়া প্রতিবেশীরা এ জন্য দায়ী করছে গ্রামে ক্রমশ বেড়ে চলা মাদকের বাড়বাড়ন্তকে। স্থানীয় বাসিন্দা অরূপ বাগচির কথায়, “আমাদের গ্রামে মাদকের তেমন প্রভাব ছিল না। পাশের গ্রামের মাদক ব্যবসায়ীদের প্রভাবে রতনের মতো যুবকেরা বিপথে গিয়েছে। প্রতিবাদ করেও ফল হয়নি।” অন্য এক প্রতিবেশী প্রণব সাহা বলেন, “গ্রামে ক্রমাগত বেড়ে চলা মাদকাসক্তির বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউ কান দেয়নি। মাদক ব্যবসায়ীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হয়ত এই মর্মান্তিক ঘটনা আটকানো যেত।”
ক্রিকেট। করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার পরিচালনায় সোমবারের সিনিয়র ডিভিশনের দুটি খেলায় জয়ী হল কেচুয়াডাঙা ক্লাব ও করিমপুর গেট-টুগেদার ক্লাব জয়ী হয়। লিগের প্রথম খেলায় কুচাইডাঙার মাঠে যমশেরপুর বয়েজ ক্লাবের মুখোমুখি হয় কেচুয়াডাঙা ক্লাব। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কেচুয়াডাঙা ক্লাব ৩৫ ওভারে ৩৪৬ রান করে। জবাবে যমশেরপুর বয়েজ ক্লাব সব উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রান করে।