শেখপাড়ায় বৃন্দা কারাত।
হাতে আর সাত দিনও নেই। মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুরে প্রচার-যুদ্ধে নেমে পড়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল।
রবিবাসরীয় ছুটির দিন ভোট প্রচারে বর্তমান ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেই মুর্শিদাবাদে থাকবেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন লালবাগ আস্তাবল ময়দানে দলীয় প্রার্থী বদরুদ্দোজা খানের হয়ে সভা করবেন, তখন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন সীমান্ত লাগোয়া ডোমকলে। সেখানে তিনি দলীয় প্রার্থী তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ আলির হয়ে সভা করবেন।
ওই দিনই জঙ্গিপুর লোকসভার অরঙ্গাবাদ ও ধুলিয়ানে দু’টি সভায় হাজির থাকবেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমের মানিক সরকার। তিনি জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী মুজাফ্ফর হোসেনের প্রচার সভায় থাকবেন। সিপিএমের মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও একটি সভায় নয়, বহু সংখ্যক মানুষের কাছে দলের নীতি-আদর্শের কথা ছড়িয়ে দিতেই বিভিন্ন বক্তা বিভিন্ন সভা করছেন।”
বস্তুত, ভোট প্রচার করতে আগামী ১৯ ও ২০ এপ্রিল ‘চাঁদের হাট’ বসবে মুর্শিদাবাদে। শনিবার দুপুর ১২টায় রাহুল গাঁধী বহরমপুরে। ওই দিনই নবগ্রাম কলেজ ময়দানে দুপুর তিনটের সভা সেরে সূর্যকান্ত মিশ্র চলে যাবেন জঙ্গিপুরে সাড়ে ৫টার সভায় হাজির হওয়ার জন্য। মিঠুন চক্রবর্তী ও মুকুল রায়ের যুগলবন্দি মুর্শিদাবাদে তিনটে সভায় হাজির থাকবেনহরিহরপাড়া দুপুর ১২টায়, ভগবানগোলায় দেড়টা নাগাদ ও দুপুর তিনটেয় সাগরদিঘিতে।
লালবাগে কংগ্রেস প্রার্থী মান্নান হোসেন।
রাহুল গাঁধী জেলায় আসার ঠিক আগের দিন ও পরের দিন মিলিয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদে চারটে সভায় হাজির থাকবেন। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টেয় ফরাক্কায় সভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহ (দক্ষিণ) কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেনের সমর্থনে সেখানে সভা রয়েছে। জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ আসনের পাশাপাশি মালদহ (দক্ষিণ) কেন্দ্রেরও ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৪ এপ্রিল। ওই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে মুর্শিদাবাদের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র ফরাক্কা ও সামশেরগঞ্জ রয়েছে। ২০ এপ্রিল তৃণমূলনেত্রী মুর্শিদাবাদে তিনটে সভায় হাজির থাকবেন। ওই দিন তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের সমর্থনে জঙ্গিপুরে প্রথম সভা করবেন। দ্বিতীয় সভা করবেন খড়গ্রামে। বহরমপুর লোকসভার সীমান্ত লাগোয়া খড়গ্রাম অবশ্য জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ওই সভা সেরে তৃণমূলনেত্রী যাবেন জলঙ্গিতে, যেখানে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মহম্মদ আলির সমর্থনে সভা হবে।
শাসকদলের আগ্রাসী প্রচারের কাছে স্বাভাবিক ভাবেই পিছিয়ে পড়েছে অন্য দলগুলি। জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “শাসক দল ভাবছে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে ভাষণ দিলেই বেশি বেশি ভোট পাওয়া যাবে। কিন্তু মুর্শিদাবাদের রাজনীতি সচেতন মানুষ তৃণমূলের ওই ভাষণবাজির রাজনীতিকে ভাগীরথীতে বিসর্জন দিয়েছে। ভোটের ফল বের হলেই তা দেখা যাবে।”
উত্তরে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের আহ্বায়ক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভালবাসেন বলেই তিনি বার বার করে মানুষের দরবারে ছুটে যান। আত্মতুষ্টিতে ভুগছে কংগ্রেস দল। ভোটের পরই তা বুঝতে পারবে ওরা।”
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সভা করতে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে সিপিএমের বৃন্দা কারাত ইসলামপুরের শেখপাড়া ও বহরমপুরের রাধারঘাটে দু’টি সভা করেন। সিপিএমের নীলোত্পল বসু যান সাগরদিঘিতে।
তবে প্রথম দফার ভোট প্রচারে অনুপস্থিত বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব। বিজেপির জেলা সম্পাদক সুভাষ মণ্ডল বলেন, “কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃবর্গ ভোটে প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় তাঁরা নিজেদের কেন্দ্রে প্রচারে ব্যস্ত। জেলার প্রথম দফার ভোটে অনুপস্থিত থাকলেও আগামী ১২ মে দ্বিতীয় দফার ভোটের প্রচারে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বকে আনার চেষ্টা হচ্ছে।”
ছবি: বিশ্বজিত্ রাউত ও গৌতম প্রামাণিক।